সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই চলছে পদত্যাগ। এ সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অধিদপ্তর, কমিশন, দপ্তরের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকালও পদত্যাগ করেছেন অনেকে। গতকাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। পদত্যাগ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল বাকী। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুব ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ সামচুল আলমও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদও। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ক্যাম্পাসে তারা আমার কুশপুত্তলিকা দাহ করছেন। এভাবে তো আর একটা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা যায় না। তাই পদত্যাগ করেছি। বিকালে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুনও গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এ নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহউপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল বাকী। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে চ্যান্সেলর বরাবর তিনি এ পদত্যাগপত্র জমা দেন।
গতকাল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুব ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ সামচুল আলম। ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি তাদের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদও পদত্যাগ করেছেন। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রায় দুই বছর নিয়মিত ডিজি থাকার পর গত ১৩ এপ্রিল চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হলে আরও এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল সাবেক সরকার। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাগ্নে।
এ ছাড়া গতকাল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন। তিন বছরের চুক্তিতে গত বছরের মার্চে বিইআরসিতে নিয়োগ পান সাবেক এই জ্যেষ্ঠ সচিব। এদিকে কমিশনের তিন সদস্য গত দুই দিন ধরে অফিসে আসছেন না। তাদেরও পদত্যাগের দাবি করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে গতকাল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনকে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রেখে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকরা। সকাল থেকে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।