বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - ডা. এ জেড এম জাহিদ

কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্দয়-নির্মম ব্যবহার

শফিউল আলম দোলন

কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্দয়-নির্মম ব্যবহার

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতে চেয়েছিল পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার। তিনি যাতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন সে ব্যবস্থা করেছিল তারা। তাঁর আজকের এই মারাত্মক অসুস্থতার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা ও তার অবৈধ মন্ত্রিসভার সদস্যরা। সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি মামলায় সাজানো রায় দিয়ে তাঁর জীবন থেকে সাড়ে ছয়টি বছর ছিনিয়ে নিয়ে গেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। কারাগারে চরম নির্দয়-নির্মম ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। চিকিৎসার মৌলিক অধিকারটুকু পর্যন্ত তাঁকে দেওয়া হয়নি।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএনপির অন্যতম এই নীতি-নির্ধারক সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ অন্যায় আচরণের পাশাপাশি দেশের ভিতরে গণহত্যা ও লুটপাটসহ যাবতীয় অপকর্মের বিচার করার জন্য অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। 

সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যা এবং বিগত ১৬ বছরের লুটপাট, দুর্নীতি, খুন, গুমসহ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের যাবতীয় অপকর্মসহ আগামী দিনে অন্তর্বর্তী সরকার ও মানুষের করণীয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে খুব শিগগিরই উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেওয়া হবে। তাঁর সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি। অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো সক্রিয় ও সোচ্চার। এদের ব্যাপারে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক মানুষকে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। ছাত্র-জনতার বুকের রক্তের ওপর অর্জিত বিজয়কে ম্লান করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন অপকর্মে যারা জড়িত হয়েছে, তারা দেশপ্রেমিক নয়, দেশদ্রোহী। তাদের রুখে দিতে হবে। আমাদের সন্তানদের বুকের রক্তের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তা আমরা কিছুতেই নষ্ট হতে দিতে পারি না। এক ফ্যাসিবাদ দূর করে নতুনভাবে আর কোনো ফ্যাসিবাদকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি না। বাংলাদেশের এই বিজয়কে ভ-ুল করে দিতে এরা দেশে-বিদেশে সদা সচেষ্ট রয়েছে। এদের যে কোনো মূল্যে পরাজিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপিপ্রধানের ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারপতির তকমা লাগিয়ে আদালতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিএনপি নেতা-কর্মীসহ নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাচার করার জন্য। বিচার বিভাগও তখন আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ বিভাগে পরিণত হয়েছিল। তারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে তৈলমর্দন ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। নির্বাহী বিভাগের নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে দেশের বিচার বিভাগ। এ সময় দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচার বিভাগ, পিলখানা হত্যাকা সহ নানা বিষয়ে কথা বলেন বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী এবং দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই নম্র রাজনীতিক। এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে পতিত শেখ হাসিনার সরকার। অথচ মানুষ প্রকাশ্যে ক্ষোভ কিংবা দুঃখ প্রকাশ করতে পারেনি। মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করে ঘরের ভিতরে বসে কান্না করেছে। এত অপকর্ম এবং অসংখ্য গুম-খুনের নির্দেশদাতা ও রাজপথে ছাত্র-তরুণদের গণহারে হত্যা করার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা। গণহত্যার বিচারের জন্য অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের অনেক আশা। আশা করি, তিনি বিগত ১৬ বছরের সব জঞ্জাল পরিষ্কার করে দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবেন। ধসে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার ও পুনর্গঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু একটি জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। বিশিষ্ট চিকিৎসক বলেন, ড. ইউনূস বাংলাদেশের গৌরব। সারা পৃথিবীতে তিনি সুপরিচিত ব্যক্তি। সারা বিশ্ব তাকে সম্মান করে। কিন্তু পতিত সরকার, পতিত স্বৈরাচার তাকে সবসময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের জনগণ আশা করে, তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দীর্ঘদিনের জঞ্জাল দূর করবে। সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ অর্থনীতিতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের নামে গত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি প্রহসন মঞ্চস্থ হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখেছে। বাংলাদেশকে সর্বদিক থেকেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে নিয়েছিল ওই ফ্যাসিস্ট সরকার। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছেন বীর আবু সাঈদের মতো লড়াকু শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে আবার গণতন্ত্রের ট্র্যাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। আমরা অনেক আশা করে প্রফেসর ড. ইউনূসের দিকে তাকিয়ে আছি।

সর্বশেষ খবর