রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর না করা বড় দুর্বলতা

ড. তুহিন ওয়াদুদ

কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর না করা বড় দুর্বলতা

রিভারাইন পিপল’র পরিচালক ও নদী গবেষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, বন্যা প্রাকৃতিক বাস্তবতা। এটার স্থায়ী সমাধান বলে কিছু নেই। কিন্তু মানুষের পক্ষে যে সমাধানগুলো সম্ভব, সেই পথগুলো থাকা উচিত। আমাদের প্রথম দুর্বলতা আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর না করা। ফলে আন্তসীমান্ত নদীর পানি নিয়ে যে অন্যায় আমাদের সঙ্গে হচ্ছে, তার প্রতিকার চাইতে পারছি না। যত দ্রুত সম্ভব এই কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করে আইনি প্রতিকার চাইতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের নদীগুলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিচর্যা করলে অনেক বন্যা থেকে আমরা বাঁচতে পারতাম। বন্যার স্থায়ী সমাধান প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের কয়েকটা স্তরে ভাবতে হবে। উজানে ভারতের সঙ্গে ৫৪টা নদীর কথা বলা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দেড় শতাধিক নদী। আমার কাছেই ১৩০টি নদীর হিসাব আছে। প্রথমে আমাদের আন্তসীমান্ত সবগুলো নদীর স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা বলছি ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশন অনুযায়ী ভারত এ কাজ করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশ তো আন্তর্জাতিক পানি বণ্টন কনভেনশনে অনুসমর্থন করেনি। কনভেনশনটি হওয়ার সময় বলা হয়েছিল ৩৫টি দেশ অনুসমর্থন করার পর এটি কার্যকর হবে। ২০১৪ সালে ভিয়েতনাম ৩৫তম দেশ হিসেবে কনভেনশনে অনুসমর্থন করেছে। অথচ, কনভেনশনটি সবচেয়ে বেশি জরুরি বাংলাদেশের জন্য। ফলে বাংলাদেশ যে প্রতিকার চাইবে, সেই অধিকারই আমরা তৈরি করতে পারিনি। এজন্য আগে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশনে অনুসমর্থন করতে হবে। তারপর এর আইনগত প্রতিকার চাইতে হবে। তৃতীয়ত, অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ভারতের সঙ্গে আমাদের সুনির্দিষ্ট আলাপ হতে হবে। অতীতে ভারতের কাছ থেকে পানি চাওয়ার ক্ষেত্রে যে নতজানু অবস্থা দেখেছি, এটা খুবই লজ্জার। পানির ন্যায্য হিস্যা জোরালোভাবে চাওয়া আমাদের অধিকার। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশনে বলা আছে উজানে যদি কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়, তার ভাগ ভাটির দেশ পাবে। ওপরের দিকের কোনো দেশ বাঁধ দিলে তার জন্য ভাটির দেশের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ ওপরের দেশটা দেবে। সুতরাং এই ক্ষতিপূরণ আমাদেরকে চাইতে হবে। তার আগে কনভেনশনে অনুসমর্থন করতে হবে। এগুলো করতে পারলে আন্তসীমান্ত নদী নিয়ে একটা সমাধান হবে। তবে শুধু ওই সব নদীর কারণেই যে সমস্যা হয় তা নয়। তিস্তা নদীর বয়স ২৩৭ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে এই নদীটার একবারও পরিচর্যা হয়নি। উল্টো এই নদীটার সব শাখা নদীর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক বন্যা থেকে রক্ষা পেতাম যদি এই নদীগুলোর বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা থাকত। অর্থাৎ আন্তসীমান্ত নদীর ব্যাপারে দ্বিদেশীয় ব্যবস্থাপনা যেমন থাকতে হবে, নিজ দেশের নদীগুলোর ব্যবস্থাপনাও থাকতে হবে। এগুলো বন্যার স্থায়ী সমাধানের বড় বড় ক্ষেত্র। বাঁধের বিপরীতে বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে এই নদী গবেষক বলেন, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভারত যদি সব পানি প্রত্যাহার করতে পারে, তখন বর্ষাতেও বাংলাদেশকে পানি দেবে না। তারা আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প গ্রহণ করেছে, আমরা যাকে বেসিন প্রজেক্ট বলি, অর্থাৎ এক নদীর পানি অন্য নদীতে নিয়ে যাওয়া। অনেক বুদ্ধি-প্রকৌশল খাটিয়ে তারা পানি বহু দূরে নিয়ে যাচ্ছে, আগামীতে আরও নিয়ে যাবে। যখন তারা পুরো পানি নিয়ে যেতে পারবে, তখন বর্ষাতে পানি দেবে না। ভারত এখন শুধু তিস্তার পানি সরাচ্ছে না, ধরলার পানিও সরাচ্ছে। আমরা টের পাচ্ছি না। ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে দেশ। আমাদেরকে আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে অধিকার আদায় করতে হবে।

সর্বশেষ খবর