ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে ২০ দিন কাটিয়েছেন সেখানে। তবে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সবার কূটনীতিক লাল পাসপোর্ট বাতিল করায় নিয়ম অনুযায়ী তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে। ভারতীয় ভিসানীতি অনুযায়ী, যেসব বাংলাদেশির কাছে কূটনীতিক লাল পাসপোর্ট আছে তারা ভিসা ছাড়াই ভারতে প্রবেশ এবং সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন। গতকাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা ২০ দিন ভারতে কাটিয়ে ফেলেছেন। ফলে আর মাত্র ২৫ দিন পর বৈধ উপায়ে তার ভারতে থাকার সময় শেষ হয়ে যাবে। এর পর তিনি হয়ে যাবেন অবৈধ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, কূটনীতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় শেখ হাসিনার ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫১টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ৪২টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়টি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তির মধ্যে পড়বে। ২০১৬ সালে চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায় করা মামলার আসামি হলে অভিযুক্তকে প্রত্যর্পণ বা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। কিন্তু এই চুক্তিতে হত্যা মামলার বিষয়টি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যদি মামলা ‘ন্যায়বিচার না করার উদ্দেশ্যে করা হয়’ তাহলেও দুই দেশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ না করার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও মামলা : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ে আহসান কবির শরীফ নিহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদে পলক, সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ায় সাবেক এমপি সাহাদারা মান্নান ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াছিয়া আক্তার রুনাসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসার ছাত্র হত্যায় সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদিরসহ ২৬ জনের নামে এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের ৮৬ নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এদিকে, খুলনায় শেখ পরিবারের চার সদস্য ও মেয়র-এমপির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবর পাওয়া গেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহসান কবির শরীফ নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদে পলক, সাবেক এমপি শামীম ওসমান, কবির হোসেন, তাজিম বাবু ও নজরুল ইসলাম ওরফে বুইট্টা নজরুলসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল নিহতের বাবা হুমায়ুন কবির মাস্টার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এ মামলা করেন।খুলনা : খুলনায় বিএনপির অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার চাচাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বাবুসহ আওয়ামী লীগের ২১৫ জন নেতার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সাবেক এমপি এস এম কামাল হোসেন ও বেগম মন্নুজান সুফিয়ানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়। শুক্রবার রাতে খালিশপুর থানায় মামলা দুটি করেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শেখ দবির ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো. ইকরাম মিন্টু। ২০২২ সালে ২৭ আগস্ট ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ অভিযোগে মামলাটি করা হয়। অপরদিকে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে ইকরাম মিন্টুর মামলায় ১০৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়।
বগুড়া : বগুড়ার সাবেক এমপি সাহাদারা মান্নান ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াছিয়া আক্তার রুনাসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম বুলুর ছেলে শামীনুর ইসলাম শামীম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টিএ রোডে সংঘর্ষের সময় মাওলানা হোসাইন আহাম্মদ হত্যার ঘটনায় তার বড় বোন তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে শুক্রবার মামলাটি করেন। মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মুজিবুর রহমান বাবুল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভন প্রমুখ।