যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বন্যার্তদের জন্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে পালিত হয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মেতিথি শুভ জন্মাষ্টমী। শ্রী শ্রী গীতাযজ্ঞ, কৃষ্ণপূজার মধ্যদিয়ে গতকাল কৃষ্ণের জন্মেতিথি পালন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। উৎসবের খরচ কমিয়ে সেই অর্থ দুর্গতদের কাছে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞের মাধ্যমে জন্মাষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিকালে পলাশীতে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে বিভেদ সৃষ্টি করে। এসবের বিপরীতে দেশের স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে। গত ১৫ বছর যতবার মন্দিরে হামলা হয়েছে কখনো তার বিচার হয়নি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এমন ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জনগোষ্ঠী অনিরাপদ থাকলে পুরো বাংলাদেশ অনিরাপদ থাকবে। তাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে সব জনগোষ্ঠীর সমান মর্যাদা নিশ্চিত করতে চাই। দেশকে এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে বাইরের দেশের শক্তিকে রুখে দিতে হবে। সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পালসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নেতারা গুরুবরণ করেন। বাসুদেব ধর বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রতি বছরের মতো এবারও জন্মাষ্টমী উদযাপন করা হবে। এরই মধ্যে আকস্মিকভাবে বন্যায় দেশের একটি বিরাট অংশ প্লাবিত হয়ে গেল, জনগণের একটি বিরাট অংশ অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে পড়ল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, পূজার বাইরেও এমন কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে, যেগুলো না করলেও চলে। যেমন অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, শোভাযাত্রায় আমরা অনেক কিছু বাদ দিতে পারি। বাসুদেব বলেন, ‘সারা দেশের মানুষকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি, তারাও যেন এভাবে জন্মাষ্টমীর খরচ বাঁচিয়ে বন্যার্তদের জন্য আমাদের এখানে অর্থ পাঠিয়ে দেন। যাতে একটি বড় অঙ্ক বন্যার্তদের জন্য ব্যয় করতে পারি। ’৮৮ এর বন্যা, ’৯৮ এর বন্যায় আমরা পূজার খরচ বাঁচিয়ে বন্যার্তদের সহযোগিতা করেছি। জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হোক। ক্ষমতার পালাবদলের কারণে আমাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, এটা কেটে যাক, শান্তি ফিরে আসুক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেন দেশ গড়তে পারি।’ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মেগ্রহণ করেন। তিনি সনাতন ধর্মের অবতার হিসেবে প্রেম, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন।