মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী আজ

‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণ-তুর্য!’ এ কবিতার এমন পঙ্ক্তিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেভাবে দ্রোহের উন্মাদনায় মত্ত হয়েছিলেন ঠিক তেমনি গানে গানে প্রিয়ার প্রতি ভালোবাসার ব্যাকুলতা প্রকাশে লিখেছিলেন, মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল। দ্রোহ, প্রেম চেতনায় কবি ছিলেন অনন্য। আজ ১২ ভাদ্র মঙ্গলবার বাঙালির নির্ভরতার প্রতীক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ১৩৮৩ সালের (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/যেন গোর থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’ মৃত্যুর পর কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। তাঁর রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত। জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বেলা ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে নজরুলবিষয়ক একক বক্তৃতা প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহা. নায়েব আলী। কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক। অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী ও সাম্যের এ কবি আছেন কোটি বাঙালির হৃদয়ে। জীবদ্দশায় তিনি সর্বদা হিন্দু-মুসলমানের মিলনের গান গেয়েছেন। তাঁর ইসলামী সংগীত ও গজল আজও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন শ্যামাসংগীত রচনার ক্ষেত্রেও। বিদ্রোহী কবির মর্যাদা পেলেও তিনি ছিলেন মূলত প্রেমের কবি। কাজী নজরুল ইসলামই এ দেশের সমাজচেতনা ও রাজনৈতিক জগতের সর্বোত্তম কবি, যিনি গণমানুষের সঙ্গে সাহিত্যের যোগসূত্র গড়ে তোলেন। প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। তাঁর বিচিত্র জীবনে স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। রুটির দোকানেও কাজ করেন। ১৮ বছর বয়সে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। একসময় তিনি ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এ সময় তিনি রচনা করেন ‘বিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙার গান’ কবিতা। রচনা করেন সাময়িকী ধূমকেতু। একসময় তিনি জেলবন্দি হন। কারাবন্দি অবস্থায়ই লেখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’।

তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। কাজী নজরুল ইসলাম নিজ গ্রামে মসজিদ ও স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলায়ই কবিতা ও গান লেখা শুরু করেন। নিজে বিভিন্ন আসরে গান পরিবেশন করেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপম ূকতার বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চকণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, চক্রবাক, প্রলয় শিখা, মরু ভাস্কর, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, পুবের হাওয়া, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন কাজী নজরুল। তাঁর গানের বাণী হয়ে ওঠে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের পক্ষে শক্তিশালী হাতিয়ার।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর