বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কলকাতা

মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কলকাতা

কলকাতায় গতকাল বিক্ষুব্ধ জনতা -এএফপি

ডাক্তার ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের বিচার দাবিতে ছাত্র সমাজের ডাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিযান কমসূচি পালনকালে গতকাল নবান্ন এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। অরাজনৈতিক সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ এর ডাকা কর্মসূচি সমর্থন করে ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’ নামে অন্য একটি সংগঠন। ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এ অভিযানে শামিল হন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরাও। তারা ‘দফা এক দাবি এক/মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ’ স্লোগান দিতে দিতে মিছিল করে। তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। সকাল থেকেই কলকাতার প্রধান দুটি পয়েন্টে আন্দোলনকারীরা জমায়েত হন- কলেজ স্কোয়ার ও সাঁতরাগাছি এলাকায়। সেখান থেকেই হাজার হাজার আন্দোলনকারী নবান্নের দিকে যাত্রা শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিল রুখে দিতে এবং অশান্তি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রায় ৬ হাজার পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স। হাওড়া ব্রিজের কলকাতা অংশের দিকে অ্যালুমিনিয়ামের উঁচু গার্ডওয়াল দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও সেই গার্ডওয়ালের রেলিঙে তেল জাতীয় পদার্থ লাগিয়ে পিচ্ছিল করে দেওয়া হয়। যাতে আন্দোলনকারীরা তা বেয়ে টপকাতে না পারে। বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয় পুরো নবান্ন। কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয় রাজ্যের সচিবালয়কে। নবান্ন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জারি করা হয় ১৬৩ ধারা অর্থাৎ পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েত আইনগত নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই আইনকে উপেক্ষা করেই সামনের দিকে এগোতে থাকে মিছিল। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। হাওড়া ময়দান এলাকায় জমায়েতকারীদের মধ্য থেকে পুলিশ লক্ষ্য করে পাথর, কাচের বোতল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ, আর তাতেই মাথা ফাটে এক পুলিশকর্মীর। এরই মধ্যে একটি পুলিশ কর্মীকে মাটিতে ফেলে আন্দোলনকারীদের একাংশ মারধর করার একটি ছবি সামনে আসে। জানা যায় হাওড়া ময়দানের সামনে ওই পুলিশ কর্মীকে একা পেয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। সব মিলিয়ে দুই পক্ষের এ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে একাধিক পুলিশকর্মীর পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের অনেকেই আহত হন। বেশ কিছু জায়গায় আন্দোলনকারীদের বহনকারী বাস, ট্রাক বা অন্য গাড়িকে আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে একাধিক জায়গায় সড়ক অবরোধে বসে পড়ে আন্দোলনকারীরা। ফলে তৈরি হয় যানজট। অসুবিধায় পড়েন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই কড়া পাহারায় নবান্নে যান। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে হাতও নাড়েন তিনি। এরপর সোজা ১৪ তলায় নিজের ঘরে চলে যান মমতা। আর সেখান থেকে গোটা পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখেন। ছাত্রদের ডাকা এ অভিযান কেন্দ্র করে যাতে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিয়ে বারে বারে আলোচনায় বসলেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটানোর ঘটনার প্রতিবাদ করে বুধবার রাজ্যজুড়ে আধাবেলা (সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা) বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। ছাত্রদের ওপর পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদেই বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঘোলা পুলিশ থানার অন্তর্গত নাটাগড়ের অম্বিকা মুখার্জি রোডের বাসিন্দা ওই ডাক্তারি ছাত্রীকে আর জি কর হাসপাতালের ক্যাম্পাসের মধ্যেই নৃশংসভাবে খুন হন। আর সেই থেকেই গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, আন্দোলনে বসেছে ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীরাও। আলাদা করে পথে নেমেছে রাজ্যটির প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ- এ এক দফা দাবিতে প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি পুলিশ থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল। রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে সেই আন্দোলনের আঁচ গিয়ে পড়েছে গোটা ভারতে। এমনকি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিদেশের মাটিতেও ওই নির্যাতিতা ছাত্রীর সহমর্মিতায় পথে নেমেছেন হাজারো মানুষ। এরই মধ্যে ছাত্র সমাজের ডাকা এ নবান্ন অভিযান।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর