বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের পাশে বিভিন্ন ইসলামী দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো। তারা সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য নিয়ে বানভাসি মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তারা দেশবাসী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামী : গতকাল সদর দক্ষিণ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকায় পনেরো শত মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেন কুমিল্লা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মো. শাহ্জাহান। এ ছাড়া বন্যার শুরু থেকে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবারসহ এ উপজেলার দশ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা করেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী দিনেও জামায়াতের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা। জেলা জামায়াত আমির সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।

ইসলামী আন্দোলন : দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, বিপদের সময়ে ধৈর্য ধারণ করা মোমেনের চরিত্র। অস্থির হলে চলবে না, তাই ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখতে হবে। গতকাল লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প পরিদর্শন ও বন্যার্তদের মাঝে হাদিয়া বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ ছাড়াও সোনাইমুড়ী আলিয়া হামিদিয়া মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্র, নোয়াখালী সেনবাগের কানকির হাট বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন ও অর্থ বিতরণ করেন। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, প্রতি বছর ভারত থেকে আসা পানি আমাদেরকে তলিয়ে দেয়। এর স্থায়ী সমাধান করা দরকার। এজন্য প্রয়োজনে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বাঁধ দিতে যা করার দরকার দেশের মানুষ তা করতে প্রস্তুত আছে। বাংলাদেশের জনগণ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিজেদের অর্থ দিয়ে শক্তিশালী বাঁধ দেওয়া হলে আগ্রাসী ভারত আর কখনো তলিয়ে দিতে পারবে না।

মাইজভাণ্ডারী অ্যাসোসিয়েশন : দেশের বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে দিনব্যাপী খাদ্যসামগ্রী ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন অরাজনৈতিক সংগঠন আশেকানে মাইজভাণ্ডারী অ্যাসোসিয়েশনের পৃষ্ঠপোষক মাওলানা ছৈয়দ মুজিবুল বশর আল হাচানী আল মাইজভাণ্ডারীর পক্ষ থেকে আশেকানে মাইজভাণ্ডারী অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা ও সদস্যরা। আশেকানে মাইজভাণ্ডারী অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু হয় চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ ও ফেনী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে দিনব্যাপী এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয় এবং বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত সবার সার্বিক মঙ্গল কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন আলহাজ মাওলানা ছৈয়দ মুজিবুল বশর আল হাচানী আল মাইজভাণ্ডারী।

খেলাফত আন্দোলন : দলের আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেছেন, ভারত আন্তর্জাতিক সব আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে। যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে শুকিয়ে মারে। আর বর্ষা মৌসুমে ভারত সব বাঁধ ছেড়ে দিয়ে এদেশের মানুষকে বন্যার পানিতে ডুবিয়ে মারছে। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। মাওলানা হামিদী আরও বলেন, ইসলাম সহমর্মিতা ও মানবতা, কল্যাণের ধর্ম। ইসলামের আদর্শই হচ্ছে একে অপরের সহযোগিতা করা, একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ানো। গতকাল কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ শ্যামপুর, উত্তর শ্যামপুর, পীর যাত্রাপুর, জগতপুর ও সাদকপুর বন্যায় প্লাবিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে সহায়তা প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মুফাসসির হোসাইন, মুফতি জাকির বিল্লাহ প্রমুখ। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাউল, চিড়া, ডাল, আলু, সয়াবিন তৈল, বিস্কুট, মিনারেল ওয়াটার, শিশুখাদ্য, ওরস্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেওয়া হয়।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত : চট্টগ্রাম হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে ত্রাণ বিতরণ করছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীস কাজী মুহাম্মদ মুইন উদ্দিন আশরাফী। তিনি বলেন, বন্যার শুরু থেকে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবারসহ এ উপজেলার দশ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা করেছেন।

ফেনীতে বন্যার্তদের পাশে হেফাজতে ইসলাম : ফেনীতে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল ফেনী সদরের কাতালিয়া গ্রামে প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় কাতালিয়া গ্রামের একটি মাদরাসায় আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। হেফাজত মহাসচিব বলেন, আমাদের এই মাদরাসা ক্যাম্প থেকে ২০ ইউনিট একযোগে কাজ করছে। এখান থেকে আমরা পাঁচটি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করছি। আমরা বৃহত্তর নোয়াখালী, ফেনী ও কুমিল্লা জেলায় প্রায় ২৫ লক্ষাধিক টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। এ সময় হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি বশিরুল্লাহ, অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানী, সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াসুর রহমান হামিদী, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ, সহকারী সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা রাশেদ বিন নূর, সহকারী দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা সানাউল্লাহ খাঁন, মুফতি মাহমুদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর