ছাত্রসমাজের ওপর পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে বুধবার পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর ডাকা আধাবেলা ‘বন্ধ’ পালনকালে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। ট্রেন, সড়ক অবরোধের পাশাপাশি একাধিক জায়গায় ভাঙচুর, কোথাও বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা, গুলি চালানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের মতো অশান্ত উত্তপ্ত করতে চাইছে। তিনি বলেন, এ রাজ্যকে বাংলাদেশ করতে চাইলে দিল্লির আসন টলমল করে দেব।
গত ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজে এক ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মমতার পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার রাজ্যের সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিযানের ডাক দেয় ছাত্রসমাজ। কর্মসূচি পালনকালে ছাত্রসমাজের ওপর পুলিশের অত্যাচারের অভিযোগ তুলে বন্ধ ডাকে বিজেপি।
সকাল থেকেই উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা, বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, হুগলিসহ প্রতিটি জেলায় অবরোধ করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। আবার উল্টোদিকে এই বন্ধকে ব্যর্থ করতে রাস্তায় নামে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাও। বন্ধকে উপেক্ষা করে রাজ্যটির কিছু কিছু জায়গায় স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকান, বাজার, কলকারখানা, আদালত প্রায় সবই খোলা থাকতে দেখা যায়। যদিও সেখানে হাজিরার সংখ্যা ছিল কম। বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার নেতৃত্বে কর্মীদের নিয়ে ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। দিতে থাকেন স্লোগান। যার জেরে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। ব্যারাকপুরে বিজেপির ট্রেন অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের বচসা বেঁধে যায়। একসময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়াতেও বন্ধ সমর্থকদের পুলিশ লাঠিপেটা করে। আসানসোলের জামুরিয়ায় বন্ধ ঘিরে বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজেপির পাঁচজন কর্মী আহত হন। দার্জিলিংয়ে অবরোধ করতে গিয়ে সদর থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় চার বিজেপি সমর্থক। বারাসাতের চাপাডালিতে জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়, যানবাহনে ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি বারাসাতে রেলস্টেশনে ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠে ট্রেনের গতিপথকে আটকানোর অভিযোগ উঠে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় দক্ষিণ বারাসাত, গোচরণ, জয়নগরসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে কোথাও রেললাইনের ওভারহেডের তারে কলাপাতা ফেলে দিয়ে, কোথাও বা ট্রেনের সামনে বিজেপির পতাকা, ব্যানার লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখান বন্ধ সমর্থকরা। পরে পুলিশ এসেও অবরোধকারীদের হটাতে পারেনি। দুর্গাপুর স্টেশনসংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে ব্যাপক ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে বন্ধের সমর্থনে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এদিন মিছিল করে এসে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার কাউন্টারে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ বাহিনী। কলকাতার গড়িয়াহাট মোড়ে অবরোধ করতে গিয়ে তৃণমূল সিএনজি চালক সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি নেতা রূপা গাঙ্গুলী। পরে ঘটনাস্থলে গড়িয়াহাট থানা পুলিশ এসে রূপা গাঙ্গুলীকে আটক করে গড়িয়াহাট থানায় নিয়ে যায়। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় ভাটপাড়ার প্রিয়াংগু পান্ডে নামে এক বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা। গুলিতে আহত হন রবি সিং নামে এক বিজেপি কর্মী। অল্প বিস্তর আহত হয়েছেন ওই গাড়ির চালক। এ ঘটনার পরই উত্তেজনা ছাড়ায় ওই এলাকায়। বন্ধকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি পাকানোর চেষ্টার অভিযোগে একাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।মমতা ব্যানার্জির প্রতিক্রিয়া : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমরা বন্ধের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। এটা কীসের বন্ধ? বন্ধ করতে হলে আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বন্ধ করো। বিকালে কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মমতা বলেন, ‘আজকে জেনেশুনে বিজেপি বন্ধ ডেকেছে। কারণ ওদের লাশ চাই। আমরা বিচার চাই, শান্তি চাই, আমরা দোষী ব্যক্তির ফাঁসি চাই। ওরা বাংলাকে বদনাম করার খেলায় নেমেছে। কিন্তু পুলিশ অনেক ভালো কাজ করেছে। বিজেপির চক্রান্তের কাছে মাথানত করে কেনো লাশ তাদের হাতে তুলে দেয়নি।’
এ ইস্যুতে প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন ‘...বাংলাদেশ করতে চাইলে, আমরা দিল্লির চেয়ার টলমল করে দেব।’ মোদি বাবু, মনে রাখবেন বাংলায় যদি আগুন লাগান, আসামও থেমে থাকবে না। উত্তর-পূর্ব ভারত, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, দিল্লি থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ারটা আমরা টলমল করে দেব।’ তার প্রশ্ন ‘এটা কি চেয়ার দখলের লড়াই? ক্ষমতা থাকলে ভোটে যাও। গুলি নয়, লাশ নয়। তোমরা কেন ধর্ষণের দোষীদের ফাঁসি দিচ্ছো না। আন্দোলনরত ডাক্তারদের কাজে ফেরানোর আবেদন করে মমতা বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন ডেকে সেখানে ধর্ষকের ফাঁসির স্বপক্ষে একটি বিল আনা হবে।