‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূতভাবে রায়’ দেওয়ার অভিযোগ এনে সাবেক তিন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাবেক সাত বিচারপতির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। গতকাল হাই কোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদালত অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে ইউনুছ আলীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিন মাসের জন্য আইন পেশা থেকে বিরত থাকার রায় দেন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ। ওই রায়কে ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ বলে তৎকালীন সাত বিচারপতির বিরুদ্ধে ইউনুছ আলী আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে হাই কোর্টে আবেদন করেন।
সাবেক সাত বিচারপতি হলেন- তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি মো. আবু বকর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান। তিনি জানান, সরাসরি আপিল বিভাগে আপিল হয়। এ বিচারপতিরা ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে শপথ ভঙ্গ করে শুনানির সুযোগ না দিয়ে অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়ে আমাকে প্র্যাকটিস (আইন পেশা পরিচালনা) থেকে বিরত রাখেন, যা সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আপিল বিভাগে ওই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার খর্ব করে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী সবাই সমান এবং ৩১ অনুচ্ছেদে আইন ছাড়া কিছু করা যাবে না বলে উল্লেখ আছে।খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আরেক মামলা : দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সদ্য পদত্যাগ করা আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন একজন আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন শাহীন গতকাল জানান। এর আগে রবিবার খায়রুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা হয়। ১৩ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেওয়ার ঘটনায় মামলাটি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী ভূঁইয়া। সেই মামলায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তন ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। তার মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়।