ঋণ করে হলেও রিজার্ভ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতির যত সংকট রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এজন্য মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে ইতোমধ্যে জিনিসপত্রের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র প্রতিনিধিদের যুক্ত করে বাজার মনিটরিং করা হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে মহাসড়কে পরিবহনের চাঁদাবাজি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রকল্পের বাকি কিস্তিগুলো সময়মতো ছাড় করার অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটির কাছে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার চাওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একাধিক বৈঠক করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকটি ছিল মূলত বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল
করার কর্মকৌশল নির্ধারণের বৈঠক। সেই বৈঠকেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকালও শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক, আইএফসি, ডিএফআইডির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। গতকালের বৈঠকের এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, অর্থবিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভাঙচুরসহ আন্দোলনের কারণে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য সে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তবে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ডলার সংকট এখন আরও তীব্র হয়েছে। ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে চাঙা করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য আগামী এক বছরের মধ্যে প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও বেশি ঋণ নিয়ে রিজার্ভ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও বিগত সরকারের আমলে বৈদেশিক ঋণের বোঝা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে ১৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থবিভাগের সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছে আরও ১ বিলিয়ন ডলার করে চাওয়া হয়েছে। চায়না ও জাপানের কাছে আরও ১ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হবে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২১ আগস্ট পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে প্রায় তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন দিনে আন্তব্যাংক বাজার থেকে ২০ কোটি ডলারের বেশি কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য রয়েছে স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার কেনা। এতে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।