স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সঙ্গে রাশিয়া ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের গতকাল পৃথক বৈঠক হয়েছে। রাশিয়া বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পটাশ সার দেবে বলে ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি জানিয়েছেন। গতকাল তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রুশ রাষ্ট্রদূত ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠকে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং সাইবার সিকিউরিটি ও ফরেনসিক ল্যাবের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশে গম ও সার সরবরাহকারী অন্যতম দেশ। জি-টু-জি ভিত্তিতে রাশিয়া থেকে গম ও সার আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন গম আমদানির টাকা পরিশোধ করেছে। বন্যা ও বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমদানিকৃত গমের সর্বশেষ চালানের টাকা পরিশোধ সম্ভব হয়নি। সার্বিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশে গম ও সার সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। রুশ রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে লিখিত দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং বিবেচনার আশ্বাস দেন। বৈঠকে রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাশিয়া বিনামূল্যে বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বা এক জাহাজ পটাশ সার সরবরাহ করবে। এদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসুদুপুই। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান। ফ্রান্সের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সব সময় আগ্রহ ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উপদেষ্টা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশের কথা শুনলেও এ ক্ষেত্রে অনেক দুর্নীতি এবং অনিয়ম হয়েছে। যে পরিমাণ অর্থ এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে তার সুফল পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের জনগণ পায়নি। আমরা দুর্নীতির জায়গাগুলো প্রাথমিকভাবে তদন্ত করছি।
সড়ক, ব্রিজ ও টানেল নির্মাণে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের : ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সড়ক, ব্রিজ ও টানেল নির্মাণে পাশে থাকার বিষয়ে আশস্ত করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ। গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আশ্বাস দেন। চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভের এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এ সরকারের কঠোর ও অনমনীয় অবস্থান সম্পর্কে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে অবহিত করেন। উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে সরকার জনগণের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ৩৪(ক) ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বোর্ডগুলো সংস্কার এবং পুনর্গঠন করা হচ্ছে।অন্তর্বর্তী সরকারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ ও প্রযুক্তিগত দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ‘বেটার এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম’ তৈরি এবং ট্রেনের লোকমোটিভ ক্রয়েও সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া, ল্যান্ড বেসড গ্যাস প্ল্যন্ট এ বিনিয়োগ ও ভবিষ্যতে সড়ক, ব্রিজ ও টানেল নির্মাণে বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক প্রধান জেমস গার্ডিনার, ইউএসএআইডির মিশন পরিচালক, কমার্শিয়াল লিডসহ মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।