দলীয় কোন্দলের জের ধরে মাগুরা সদর এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় মাগুরায় কৃষক দলের এক নেতা নিহত হয়েছেন এবং জামালপুরে প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মাগুরা : গত বুধবার সকালে মাগুরা সদর উপজেলার ডেফুলিয়া বাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত কৃষক দল নেতা ওয়াজেদ আলী (৫০) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহত ওয়াজেদ আলী ডেফুলিয়া গ্রামের মৃত তোরাপ আলীর ছেলে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহম্মদ বলেন, ওয়াজেদ আলীর মৃত্যুর খবরটি শুনেছি। তিনি আমাদের দলীয় লোক। ওই এলাকায় দুটি সামাজিক দলের মধ্যে বুধবার সংঘর্ষ হয়েছিল। জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর আলম হীরা জানান, তিনি পৌর কৃষক দলের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন।
মাগুরা সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, বুধবার সকাল ৮টার দিকে মাগুরা সদরের ডেফুলিয়া বাজারে বিএনপি সমর্থক দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের অন্তত ১৪ জনকে আহত অবস্থায় মাগুরা ২৫০ বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে শিমুল নামের একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও ওয়াজেদ আলীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওয়াজেদ আলীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর শোনার পর এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নতুন করে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে কারণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।জামালপুর : জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। বৃহস্পতিবার উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাদান ইউনিয়নের পশ্চিম পাশের দহবিলে মাছ চাষ, মাছ ধরা নিয়ে জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুুল আওয়ালের গ্রুপ এবং মহাদান ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন মাস্টারের গ্রুপের মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকে উত্তেজনা চলছিল। বৃহস্পতিবার সকালে আওয়াল চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকরা দহবিলের পাড়ে খিচুড়ি রান্নার আয়োজন করে। এ সময় লিটন মাস্টারের কর্মী-সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে দুটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুর করে এবং লুটপাট চালায়। পরে আওয়াল চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকরা পাল্টা হামলা চালিয়ে ৮টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ হামলার ঘটনায় দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আবদুল আওয়াল জানান, স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তালতলা দহসংলগ্ন বটতলা মোড় এলাকায় খিচুড়ি রান্নার আয়োজন করে। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন ও তার সমর্থকরা হামলা চালিয়ে তা প- করে দেয়। এ ছাড়াও তারা চলে যাওয়ার সময় বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে আওয়াল চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমার আটজন নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে বসতঘর ভাঙচুরসহ নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে গেছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নেতা-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে পার্টি অফিসে বসে আলোচনা করছেন। এ বিষয়ে পরে দলীয় সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।
সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।