ঘানি টানে গরু। কিন্তু গরু নেই শহিদুলের। তাই ঘানি টানার কাজটি তিনি সারছেন ঘোড়া দিয়ে। ঘোড়ার ঘানিতে সরিষা ভেঙে সংসার চলছে তার। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদনে একমাত্র অবলম্বন ছিল ঘানি। ঘানি টানার কাজে ব্যবহার করা হতো গরু। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে গরুর পরিবর্তে ঘোড়ার পায়ের খট খট শব্দে ঘুরছে কাঠের তৈরি ঘানি। ঘানির ভিতরে রয়েছে সরিষা। কাঠের হাতলের চাপে সরিষা ভেঙে পাত্রে ফোঁটায় ফোঁটায় চুইয়ে পড়ছে বিশুদ্ধ সরিষার তেল। এমন দৃশ্য দেখা যায় রানীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়া সালফারাম এলাকায়। শহিদুল ইসলাম উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া সালফারাম গ্রামের মৃত. নুর মোহাম্মদের ছেলে। গরু কেনার সাধ্য না থাকায় ঘোড়াকে বেছে নিয়ে পাঁচ বছর ধরে সরিষা থেকে তেল সংগ্রহ করে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি। সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘানির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে খাঁটি সরিষার তেলের সুগন্ধ আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় ঘোড়ার ঘড়ঘড় পাকে পাতিলে চুয়ে চুয়ে পড়ছে তেল। স্থানীয়দের মাঝে ঘানির তেলের রয়েছে অনেক চাহিদা। স্থানীয় মাসুম ও আশরাফুল বলেন, আমরা শহিদুলের তেল বাড়ির সব কাজে ব্যবহার করি। এ তেলের স্বাদ, ঘ্রাণ অতুলনীয়। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই উৎসাহ নিয়ে তেল ভাঙা দেখতে আসেন। সরাসরি নিজের চোখে দেখে এখান থেকে খাঁটি সরিষার তেল নিয়ে যান। ঘোড়া দিয়ে ঘানি টেনে সরিষার তেল উৎপাদন সচরাচর দেখা মিলে না। শহিদুল ইসলাম বলেন, তার ঘানিতে একবারে পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙানো যায়। এক দিনে পর্যায়ক্রমে দুই থেকে তিন বার সরিষা ভাঙানো যায়। প্রতিদিন এই ঘানি থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তার। ঘানির তেল বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলছে সুখের সংসার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির দাপটে বিলুপ্তির পথে ঘানিশিল্প। ঘানি ভাঙা তেল শতভাগ খাঁটি হয়। কারণ এতে কোনো ক্যামিকেল মেশানো হয় না। এতে তেলের গুণগত মান ঠিক থাকে। আমরা সরেজমিন গিয়ে তার ঘানিটি পরিদর্শন করব।