রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঋণ করে ৯৫ হাজার কোটি টাকা পাচার অনুসন্ধানে সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নামে-বেনামে ছয় ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচার করেছে এমন অভিযোগে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। গতকাল সংস্থাটির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্কোয়াড জানায়, এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা, জালিয়াতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েস এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অপরাধের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের বিষয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

সিআইডি বলছে, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এস আলমসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশেই পিআর গ্রহণ করেছেন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিজ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পদ ক্রয় ও ব্যবসায় পরিচালন করেছেন। পাচার করা অর্থে সিঙ্গাপুরে ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা অর্থাৎ ২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাছাড়াও ভুয়া নথি বানিয়ে, জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের নামে-বেনামে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎপূর্বক বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশি শেল কোম্পানি (নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে পাচার করেছেন। এস আলমসহ তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করেছেন। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বলেন, আমরা মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি তদন্ত করছি।

ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে তারা এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করবেন।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছ থেকেই প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশই নেওয়া হয়েছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে। আর সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে পাচারের টাকা দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রয়েছে, সেখানে এস আলম গ্রুপের নাম নেই। বিদেশের পাশাপাশি দেশেও গত কয়েক বছরে একাধিক বাড়ি ও জমি কিনেছে গ্রুপটি। শিল্প-কারখানার নামে ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে ওই সম্পত্তি গড়ে তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর