রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু

রাঙামাটি প্রতিনিধি

কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু

কেউ বরফ ভাঙছে, কেউ ড্রাম টানছে। কেউ আবার গাড়ি প্রস্তুত করছে। জেলেরাও জাল হাতে হ্রদ পাড়ে অপেক্ষমাণ। রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হয় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ চার মাস ছয় দিন পর এমন কর্মযজ্ঞ ফিরে এসেছে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের ফিশারি ঘাটে।

গতকাল রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন  জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান। এরপর শুরু হয় মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও জেলেদের প্রাণচঞ্চলতা। টানা বেকার সময়ের পর কর্মসংস্থান ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ফিশারি ঘাটের মৎস্যজীবীরা।

রাঙামাটি ফিশারি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগমুহূর্তে শুরু হয় মৎস্যজীবীদের ব্যস্ততা। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের ২৬ হাজার জেলে ছাড়াও প্রায় ১০০ জন ব্যবসায়ীর অধীনে শ্রমিক ও কর্মচারী আছে প্রায় ২০ হাজার। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষ রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল। টানা সময় বেকার থাকার পর নতুন করে কর্মসংস্থান গড়ে তুলেছেন এসব শ্রমিক-ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে কথা হয় ফিশারি ঘাটের মৎস্য শ্রমিক সুশীল চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকটা বেকারই ছিলাম। অন্য কোনো কর্মসংস্থান ছিল না। অভাবে চলেছে সংসার। এখন কাজ ফিরে পেয়ে আনন্দ লাগছে। একইভাবে আনন্দিত ফিশারি ঘাটের ট্রাকচালকরাও। কথা হয় ট্রাকচালক মো. জসিম উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের আহরিত মাছ ট্রাকে করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে যাই বাজারজাত করার জন্য। আয়ও হয় অনেক। কিন্তু ফিশারি বন্ধ হয়ে গেলে তেমন কাজ পাওয়া যায় না। বেকার থাকতে হয়।

জীবন চালাতে কষ্ট হয়ে যেত। এখন আবারও কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে।

রাঙামাটি বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদনক্ষেত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। যা দেশের মিঠা পানির মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এ হ্রদ থেকে আহরিত মাছ রপ্তানি করা হয় চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যার সুফল ভোগ করে এ অঞ্চলের ২৬ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার। বন্ধ সময় রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ হ্রদে ছাড়া হয় বিপুল পরিমাণ পোনা মাছ। এসব পোনা মাছ বড় হতে সময় লাগে প্রায় তিন মাস। তিন মাস পর হ্রদে মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও এবার ছিল ভিন্ন চিত্র। টানা চার মাস ছয় দিন পর প্রত্যাহার করা হয় নিষেধাজ্ঞা। রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজ উদ্দীন বলেন, বন্ধ সময়ে কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হয়েছে আশা করি। কিন্তু বন্যার কারণে কিছুটা শঙ্কা থেকে যায়। কারণ হ্রদের পানি এখনো পরিষ্কার হয়নি। জেলেরা ভালোভাবে জাল ফেলতে পারলে মাছের বাম্পার আহরণ হবে। সরকারের রাজস্ব খাতে  যেমন আয় বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদাও মিটবে।

রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উন্নয়ন ও বিপণি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশবিস্তারের জন্য কাপ্তাই হ্রদে কিছু সময় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এটা আসলে মৎস্যজীবীদের জন্য লাভ। কারণ মাছের প্রজনন হলে হ্রদে মাছ বৃদ্ধি পাবে। মা মাছ রক্ষা পেলে বংশবিস্তার হবে। তাই বছরের মাত্র তিন মাস কিংবা চার মাস হ্রদে মাছ শিকার করা বন্ধ থাকে। তিনি আরও বলেন, বন্ধ সময় অবৈধ মাছ নিধনসহ পোনা মাছের রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএফডিসির সব কর্মকর্তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আশা করি মাছ আহরণে সফলতা আসবে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ৬৬টি দেশি প্রজাতির ও ছয়টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর