সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
মো. সাইফুল আলম চৌধুরী

সমাধান করতে হবে প্রশাসনিকভাবে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

সমাধান করতে হবে প্রশাসনিকভাবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেছেন, কোনো শিক্ষক অন্যায় করেছেন, রাজনীতিবিদ অন্যায় করেছেন, পুলিশ অন্যায় করেছেন, সচিবরা অন্যায় করেছেন কিন্তু অন্যায়কারীর সঙ্গে অন্যায় করলে মানবাধিকার থাকে না। এটা প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। গতকাল এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষকদের যেভাবে গণহারে পদত্যাগ করানো হচ্ছে এসব কি কেবল রাজনৈতিক পক্ষাবলম্বনের কারণে নাকি ব্যক্তিগত আক্রোশে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষোভ যে একেবারে নেই, তা নয়। এ সময়ে যেসব শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হয়েছে, তার বেশির ভাগই হচ্ছেন মূলত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর এবং আন্দোলনে তাদের নেতিবাচক ভূমিকার কারণে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে যেমন- শিক্ষার্থীরা পদত্যাগ চাচ্ছে না কিন্তু কিছু বহিরাগত পদত্যাগ করতে বাধ্য করছে।  মো. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, পদত্যাগের চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে লাঞ্ছনার ঘটনা। এটা ফৌজদারি অপরাধ। যদিও শিক্ষা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বলেছেন এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ। তবে এখনো কোনো ইউএনও বা শিক্ষা কর্মকর্তা এসব ফৌজদারি অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা করছেন না বা দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না! এটা গণহারে হওয়ার কারণে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। আমরা কি তাহলে এত দিন ভুল শিখেছি! এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেখা যাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলে শিক্ষক নামের কিছু কর্মচারী থাকবে। সেখানে বিদ্যা শেখানো হবে। শিক্ষা থাকবে না। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বিদ্যা হচ্ছে আবরণে আর শিক্ষা হচ্ছে আচরণে’। অর্থাৎ আবরণটা থাকবে কিন্তু শিক্ষাটা আর আচরণে থাকবে না। শিক্ষকরা যাবেন, পড়াবেন আর শিক্ষার্থীরা পাস করে সনদ নিয়ে বের হয়ে যাবে। সেখানে এর বাইরে কিছুই থাকবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই মানবাধিকারবিহীন সরকার নয়। এ সরকারের দায়িত্ব হারিয়ে যাওয়া মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ মানবাধিকার নিশ্চিত করা। বর্তমানে উপাচার্যকে চিঠি দেওয়া, সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ চাওয়া এটা এভাবে হয় না। যারা এটা করছে তাদের কোনো না কোনো স্বার্থ আছে। দেখা যায়, যারা এই আন্দোলনগুলো করছে তাদের কারও সঙ্গে হয়তো ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা হয়েছে। এটা প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। যেহেতু শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ। সেহেতু এটাকে ফৌজদারি দন্ডের মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। আপনি যদি মানুষকে এটা দেখিয়ে না দেন যে দেশে আইন আছে তাহলে তো সবাই পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটবে। আর বাংলাদেশে একটা সিস্টেম আছে যে একটা জিনিস ঘটলে সেটার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের এক দল উসকে দেওয়ার পর তারা গিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে একটা বিষয় দেখতে হবে যে এরা সবাই শিক্ষার্থী কি না। কোটা আন্দোলনের সময় দেখেছি যারা গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে তারা কেউ শিক্ষার্থী নয়। এমনকি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ও এমন ঘটনা ঘটেছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের হাত নেই। সরকার পতনের পর অনেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সম্পদের ক্ষতি করেছে, ঘরবাড়ি দখল করেছে যেখানে শিক্ষার্থীদের কোনো হাত নেই। তাহলে শিক্ষকদের এই যে লাঞ্ছিত করার ঘটনা এখানেও যে এমনটা হচ্ছে না তা কিন্তু বলা যায় না। এমনটা হতে পারে যে ১০টা কেসের মধ্যে একটার ক্ষেত্রে হয় যে আসলেই কোনো শিক্ষক অপরাধ করেছেন এবং আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করছে কিন্তু এই বিষয়টা সরকারকে দেখতে হবে এবং সরকারের মাধ্যমেই সমাধান করাতে হবে।

সর্বশেষ খবর