শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল। টঙ্গী-সাভার-আশুলিয়ার শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষাভ দেখাতে অবরোধ করেছে মহাসড়ক। টঙ্গীতে অবরোধ হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, সাভারে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক। আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার নাসা গ্রুপের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালালে টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে রাস্তা থেকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী হা-মীম গ্রুপ, নিউএইজ, আল-মুসলিম, জনরনসহ বেশ কিছু কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাগুলো ছুটি দিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্পপুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
টঙ্গী প্রতিনিধি, গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পিপল সিরামিকস লিমিটেড নামক কারখানায় শ্রমিকরা। এ সময় মজুরি কমিশন কার্যকর, এরিয়া বিল কার্যকর, ইউনিয়ন বাতিল, ডেলি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতির পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তারা। গতকাল (রবিবার) টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় অবস্থিত কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। সরেজমিন দেখা যায়, প্রথমে সকাল ৯টার দিকে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয়পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।শ্রমিকরা জানান, কারখানার ছয় কর্মকর্তার পদত্যাগ, ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন কার্যকর, এরিয়া বিল কার্যকর, ইউনিয়ন বাতিল, ডেলি শ্রমিকদের ৫৫০ টাকা, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তারা জানান প্রায় ১০ বছর ধরে আমাদের দাবি মেনে নিতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে আসছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে গড়িমসি করছে। এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্পপুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন (মুঠোফোন) বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বেলা সাড়ে ৪টার দিকে শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়।
সাভার ও আশুলিয়ার শ্রমিক বিক্ষোভে ২০ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা : সাভার প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় ঘোষবাগ এলাকার নাসা গ্রুপের শ্রমিকরা টিফিন বিল বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, বাৎসরিক অর্জিত ছুটির টাকা প্রদানের দাবিতে কারখানায় বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী হা-মীম গ্রুপ, নিউএইজ, আল-মুসলিম, জনরনসহ বেশ কিছু কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাগুলো ছুটি দিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাইকিং করে শ্রমিকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আশুলিয়া শিল্পপুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন জিএবি লিমিটেডসহ স্নোটেক্স, স্টারলিং গ্রুপ, নাসা, হা-মীম গ্রুপ, আল-মুসলিম অ্যাপারেলস ও একমি অ্যাগ্রোভেট অ্যান্ড কনজুমারস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্পপুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
এদিকে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, অর্জিত ছুটির টাকাসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল সকাল ৮টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জিএবি লিমিটেডসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তারা জানায়, তাদের যৌক্তিক দাবি না মেনে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো একেক জায়গায় একেক রকম। কিছু অভিন্ন দাবির মধ্যে আছে হাজিরা বোনাস ও টিফিন বাবদ অর্থ দেওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, উশৃঙ্খল কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা ইত্যাদি।