মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি শিক্ষায়

নেই ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারার চলছে কার্যক্রমে স্থবিরতা

আকতারুজ্জামান

এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি শিক্ষায়

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। সরকার পতনের পর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো সচল করা যায়নি। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তত ৪৫টিতে নেই ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা ক্লাস চালু করতে আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষকদের। কিন্তু সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্তৃপক্ষ না থাকায় সে আলটিমেটামও কাজে আসছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসিতে সরকার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে অতিরিক্ত হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ দিলেও এই চেয়ারম্যান এখনো যোগদান করেননি।

অভিযোগ রয়েছে, ইউজিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নেতারা নিজেদের বিএনপিপন্থি দাবি করে এই চেয়ারম্যানকে যোগদান করতে দিচ্ছেন না। তারা ইউজিসির সদস্যদেরও অফিসে না আসতে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে- এর পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন সুবিধা নেওয়া কর্মকর্তারা। তাদের কেউ কেউ নিজেদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ দাবি করে ইউজিসিতে নানা বিশৃঙ্খলা করছেন। ইউজিসির এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণেও শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

গত জুনের শেষ দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সরকার পতনের পর স্কুল-কলেজগুলোতে ক্লাস চালু হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়নি। ফলে দুই মাসের বেশি ধরে কার্যত অচল রয়েছে উচ্চশিক্ষা বিদ্যাপীঠগুলো। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে সেশনজট। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী প্রতিবেদককে বলেন, গত ৩০ জুন প্রথম সেমিস্টারের প্রথম পরীক্ষা দিয়েছি। ৩ জুলাই দ্বিতীয় পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু শিক্ষক আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার পর সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলো। পরে ক্যাম্পাসই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন হলেও এখনো পরীক্ষা শুরু হয়নি।

আমাদের অনুষদে কোনো সেশনজট নেই দীর্ঘ বছর ধরে। কিন্তু এবার সেশনজটে পড়ে গেলাম।’ এ জট কাটিয়ে উঠতে অতিরিক্ত ক্লাসের আয়োজন করার অনুরোধ জানান এই ছাত্রী। অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শুধু উপাচার্যের পদ খালি আছে, তা নয়। উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ অনেক প্রশাসনিক পদ খালি পড়ে আছে। আগে এই পদগুলো এতটাই দলীয়করণ করা হয়েছে, শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, প্রশাসনিক দক্ষতা আছে, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে যোগ্য- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মানে এই নয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চমানের গবেষক-শিক্ষক নেই। দলীয় সংস্কৃতির কারণে যোগ্য অনেকে নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন; কিন্তু তাদের আবার বৃহত্তর শিক্ষক সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, এটাও একটা সমস্যা। তিনি বলেন, বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা না থাকার প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখন এসবের শেষ হওয়া দরকার। স্কুল-কলেজে পুরোদমে ক্লাস চালু করা দরকার। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জোর করে পদত্যাগ করানো প্রসঙ্গে এ শিক্ষাবিদ বলেন, এসব মেনে নেওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর