শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ২ হাজার কোটি টাকা ফাঁকি

দ্রুত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ (বিএটিবি) ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে ২০০ কোটি টাকার বেশি অর্থের তামাক পাতা সংগ্রহ করলেও তার ভ্যাট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পরিশোধ করেনি বহুজাতিক তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও সরকার এ অর্থ আদায় করতে পারছে না। বিএটিবির কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করা গেলে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কৃষিখাতের জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ রেখেছে তার প্রায় ২০ শতাংশ অর্থায়ন করা যাবে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকারও বেশি মূসক ফাঁকির তথ্য পায় এনবিআর। ওই সময়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) ২০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণের অর্থের তামাক পাতা ব্যবহারের তথ্য জানতে পারে। এ তামাক পাতা দিয়ে সিগারেট উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ১৯১ কোটি টাকার অতিরিক্ত তামাক পাতা ব্যবহার করে ১ হাজার ৮১১ কোটি অতিরিক্ত শলাকা উৎপাদন ও সরবরাহের অভিযোগ আনে। এতে সরকার ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট সূত্র জানায়, বিএটিবি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা (ওভারহেড               কস্ট) তামাক পাতা সংগ্রহের খরচ প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বিবরণীতে ছিল না। সেই হিসাবে স্থানীয়ভাবে তামাক পাতা সংগ্রহের জন্য খরচ হলেও ভ্যাট দেয়নি। পরবর্তীতে ভ্যাট আদায়ে একটি কমিটি গঠন করে এলটিইউ। তদন্ত শেষে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানির কাছে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ভ্যাট বাবদ পাওনা আদায়ের সুপারিশ করে কমিটি। পরে ভ্যাট আইনের ৫৫-এর ৩ ধারা অনুযায়ী চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে এলটিইউ। এতে নড়েচড়ে বসে বিএটিবি। পরে এলটিইউ ভ্যাটে দায়িত্ব নিয়ে আসেন কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিএটির শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা বাতিলের বিচারাদেশ দেন। তবে বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এই বিচারাদেশের কারণে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোও তাদের কাছে ভ্যাটের পাওনা অস্বীকার করছে। এই জটিলতা নিরসনে তদন্ত কমিটি করেছে এনবিআর। সর্বশেষ কমিটি বিশাল অঙ্কের এ রাজস্ব আদায় করতে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে নির্দেশ দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে সরকার কৃষিখাতের উন্নয়নে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। বিএটিবির কাছ থেকে ভ্যাট ফাঁকির ২০৫৪ কোটি টাকা আদায় হলে কৃষিখাতের উন্নয়ন বরাদ্দের প্রায় ২০ শতাংশ অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর