বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

গার্মেন্টে অর্ডার বিপর্যয়

কমেছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ

রাশেদ হোসাইন

ভালো নেই দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক (গার্মেন্ট) শিল্প। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিল্পকারখানাগুলোয় এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্ট কারখানায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় কারখানায় লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। চলমান শ্রমিক অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলার ফলে মালিকরা ইতোমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছেন। সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছে ৪৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করা এ খাত। ইউরোপ-আমেরিকা অঞ্চল থেকে নতুন রপ্তানি আদেশ কমছে। গত দুই মাসে ইন্টারনেট বন্ধ, কারখানা বন্ধ, শ্রমিক আন্দোলনে নতুন করে এ খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এতে অর্ডার কমছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, আগে থেকেই পোশাকশিল্পে বেশ কিছু সংকট ছিল। চলমান অস্থিরতায় অর্ডার কিছুটা কমছে। অনেকদিন কারখানা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বিদুৎ-গ্যাসের সমস্যায় পণ্য ঠিকমতো উৎপাদন করা যায়নি। রপ্তানি আগের মতো হচ্ছে না। এখন যে অর্ডার আসছে তার যথাযথ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তারা আরও জানান, শ্রমিক নামধারী বাইরের লোক এখানে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও রাজনৈতিক পালাবদল পরবর্তী অস্থিরতা শেষ হলেও কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখনো উদ্বেগ রয়েছে, সেই সঙ্গে অর্থনীতিও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময় পোশাকশিল্প মালিকরা অনেক ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য ঠিকভাবে সরবরাহ করতে পারেননি।

গত দুই মাসে গার্মেন্টের অর্ডার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমেছে জানিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত দুই মাসে মিনিমাম (কমপক্ষে) ২০ থেকে ২৫ শতাংশ অর্ডার কমেছে। এ অর্ডারগুলো বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে চলে গেছে। আন্দোলনের সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বায়াররা (ক্রেতা) আমাদের পায়নি। বায়াররা শঙ্কিত ছিল শিপমেন্ট ঠিকমতো হবে কি না। যার ফলে অন্য দেশে অর্ডার চলে গেছে। এখন লেট উইন্টার আর সামার নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকা এবং ইউরোপের সঙ্গে জিএসপি সুবিধা ও ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। এসব সুবিধা যোগ হলে অর্ডার বেড়ে যাবে।

অর্ডার কমার বিষয়ে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, গত এক মাসে দেশে নানারকম ঝামেলায় অর্ডার কিছুটা কমেছে। ছোট ছোট কিছু অর্ডার চলে গেছে। আগামী সিজনে আমাদের এ সমস্যা কিছুটা প্রত্যক্ষ করতে হবে। আন্দোলনের সময় বায়াররা একটু ভয়ে ছিল। বন্যার সময় রাস্তা বন্ধ ছিল ৪ থেকে ৫ দিন। বন্যার জন্য আমরা রপ্তানি করতে পারিনি। বায়াররা কিছুটা শঙ্কিত, ভীত নয়। ঝামেলা কাটিয়ে উঠলে আমরা সামনে ভালো দিন আশা করছি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারা বিশ্বের ব্র্যান্ড। প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আরও বাড়ানো যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ছোট ছোট কিছু সমস্যা থাকবে এসব নিয়েই আমাদের পথচলা। এসব দ্রুত সমাধান করতে হবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্ডার কতটা কমেছে তা আগামী অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে জানা যাবে। আগে যেসব অর্ডার হয়েছে এখন সেসব যে কোনো উপায়ে শিপমেন্ট করতে হচ্ছে। বিমানে হলেও পাঠাতে হবে। আগে ১২ দিন প্রোডাকশন হয়নি, সুতরাং কিছু প্রোডাকশন লস হবে।

বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, হালনাগাদ পরিসংখ্যান না থাকায় আমরাও ঠিকমতো তথ্য দিতে পারছি না। তবে যে ধরনের অর্ডার আসা উচিত ছিল তা থেকে অনেক কম আসছে। নরমাল যে অর্ডার পাওয়ার কথা ছিল সেরকম নেই। এতে বোঝা যায়, বায়াররা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এখন দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে অর্ডার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সর্বশেষ খবর