রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাতের ঢাকা ভয়ংকর

ছিনতাই-ডাকাতি, অহরহ সংঘর্ষ দখলবাজি, পুলিশের ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাতের ঢাকা ভয়ংকর

রাত বাড়লেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা যেমন ঘটছে, আধিপত্য বিস্তার, এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সন্ত্রাসীরা রাতকেই বেছে নিচ্ছে। রাজধানীর অপরাধীরা এখন রাতে ভীষণ সক্রিয়। এতে ঢাকার জনমণে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। শুক্রবার রাতেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনায় একজনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, পুলিশের টহল না থাকায় রাজধানী ঢাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রাত বাড়লেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে।

শুক্রবার রাত ১০টায় রাজধানীর মুগদায় বখাটের ধাড়ালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন আশিক এলাহী শাকিল (২৮) নামের এক যুবক। তাকে উদ্ধার করে রাত ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার দুই ভাই পারভেজ সুজন (৪৮) ও আশিক শামস (২৪)। নিহত শাকিলের বাবা ওমর ফারুক জানান, তার ছেলেদের এলপি বোতলজাত গ্যাসের ব্যবসা রয়েছে। রাতে দোকান বন্ধ করে তিন ভাই একসঙ্গে বাসায় ফিরছিলেন। পথে মুগদা কাজী বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালায় এবং ছুরিকাঘাত করেন। পরে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে রাত ১২টার দিকে শাকিলকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ ফারুক জানান, লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে পাঠানো হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে। আহত দুজন জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন।

মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান জানান, দোকানের মালামাল কমবেশি দামে ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। পূর্বের কোনো ক্ষোভ থেকেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। আজকে ভ্যান ক্রয়-বিক্রয়ের মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কিতে এই মারামারি হয়।  একই সময় রাজধানীর বনশ্রীতে কাঁচাবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে গুরুতর আহত হন চারজন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হামলার আগে বিষয়টি পুলিশকে জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি তারা। এরা সব শীর্ষ সন্ত্রাসী। জেলখানা থেকে বাহির হয়ে অত্যাচার করা শুরু করেছে। ওই বাজার নিয়ে যে কোনো মুহূর্তে একটা মার্ডার হয়ে যাবে। শুধু মুগদা বা বনশ্রী নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় না থাকায় হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর আরও কয়েকটি স্থানে। মোহাম্মদপুরের শেখের টেকে দুর্বৃত্তরা ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায় রিফাত হাওলাদার নামের এক তরুণকে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত করা হয় তাকে। পুলিশের সাহায্য চাইলেও না পাওয়া অভিযোগ পরিবারের। রিফাতের মা বলেন, আমার ছেলেকে পিছন থেকে একজন আইসা পেটের মধ্যে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।

এর আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর জনপদ মোড়ে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত পুলিশ সদস্যের নাম আশরাফ আলী (৪৭)। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগে কর্মরত। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাত ১১টায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।  ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ ফারুক জানান, জনপদ মোড়ে দায়িত্বরত অবস্থায় ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের ওই কনস্টেবল দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন। এদিকে আহত পুলিশ কনস্টেবলের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, কয়েকজন ব্যক্তি ছুরি দিয়ে আশরাফের পিঠে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ১১টায় ঢামেকে নিয়ে যান। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আহত ওই পুলিশ সদস্যকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢামেক সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ৮টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত ৫৮ জন আহত ভর্তি হয়েছেন ঢামেক হাসপাতালে। যার অধিকাংশ সংঘাত সহিংসতায় আহত। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের হামলার ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে জনমনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর