শিরোনাম
রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঝড়বৃষ্টি ফের বন্যা

♦ কক্সবাজারে তিন জেলের লাশ উদ্ধার ♦ নোয়াখালীতে আট মাঝিসহ পাঁচ ট্রলার নিখোঁজ সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত ♦ মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামা ব্যাহত

প্রতিদিন ডেস্ক

ঝড়বৃষ্টি ফের বন্যা

নোয়াখালীতে ফের বাড়ছে পানি। চট্টগ্রামে ধসে পড়েছে পাহাড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টির প্রবণতায় দেশে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভারী বৃষ্টিতে হালদা, সাঙ্গুসহ চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর পানি বেড়ে চলেছে। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই কারণে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। তবে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের সব প্রধান নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী ও মাতামুহুরী নদীগুলোর পানি কমছে। গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টির প্রবণতায় আগামী ১২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারী বর্ষণের সতর্কবাণীতে বলা হয়, স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে রংপুর,  রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : কক্সবাজারে রেকর্ড বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি। গতকাল শহর এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও অন্তত ৫০টি গ্রামে দিনভর পুরোপুরি পানি নামেনি। এতে স্থানীয়রা দুর্ভোগে আছেন। শুক্রবার ছয়টি ফিশিং ট্রলার ডুবে যাওয়ার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত পাঁচ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যেসব এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে সেসব এলাকায় ক্ষতচিহ্ন সামনে আসছে। কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার বিকালে লাবণী চ্যানেলে ঝড়ের কবলে পড়ে ছয়টি ফিশিং ট্রলার ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মোট পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকালে নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হলেও তার পরিচয় মেলেনি। এ ছাড়া দুপুরে ইনানী এলাকার সৈকতে আরও দুই জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়।

চকরিয়া (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। পানি কমতে শুরু হলেও দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। শুক্রবার রাতে নদীর তীরবর্তী এলাকার ১২টি বাড়ি মাতামুহুরী নদীতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া নদীর দুই কূলও ভাঙতে দেখা যায়। টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এখনো সব এলাকা থেকে পানি সরে যায়নি। পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

নোয়াখালী : বৈরী আবহাওয়া ও ঝড়ের কবলে পড়ে নোয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে ১০টি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১০টি ট্রলারের মধ্যে জেলেদের বিভিন্ন স্থানে এ সময় ১১২ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও এখনো বাকি পাঁচটি ট্রলারসহ ৮ মাঝি নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন।

বাগেরহাট : গভীর নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় সুন্দরবনসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্যবন্দরে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজারের অধিক ফিশিং ট্রলার।

 বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ায় সাগরে টিকতে না পারায় এসব ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী খালসহ বাগেরহাটের প্রধান মৎস্যবন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলা, রায়েন্দা, মোংলা ও রামপাল ঘাটে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল দিনভর বাগেরহাটে ৫৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে মোংলা আবহাওয়া অফিস।

পটুয়াখালী : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। তাই পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর ফলে পটুয়াখালীতে অবিরাম বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৫৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

 তবে নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল দিনভর মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গে উচ্চ জোয়ারে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারে দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে চরসহ নিম্নাঞ্চল। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস। গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৫৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তলিয়ে গেছে সদ্য রোপা আমনের মাঠ। ক্ষতির সম্মুখীন সবজির মাঠ ও বাগান। বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর