শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

এনআইডি সংকট, নাগরিক ভোগান্তি

৮ অক্টোবরের মধ্যে সেবার মান তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে : ইসি সচিব

গোলাম রাব্বানী

এনআইডি সংকট, নাগরিক ভোগান্তি

এসএসসির সার্টিফিকেট থাকলেও নামের অংশবিশেষ সংশোধন করতে পারছেন না একজন নাগরিক। তিনি নামের অংশে সাটিফিকেট অনুযায়ী ‘চন্দ্র’ যুক্ত করতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। সংশোধনের আবেদন করলেও তার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ইসির এনআইডি সংশোধন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সব কাগজপত্র দিয়েও নতুন করে তার কাছে হলফনামা চাওয়া হচ্ছে। নতুন ভোটার হতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকা উত্তর সিটির বাসিন্দা। কিন্তু ভোটার ফরমে যাচাইকারী হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি তথা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তিনি কাউন্সিলর অফিসে গিয়েও কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। আবার নির্বাচন কমিশন অফিসও তাদের এই স্বাক্ষর ছাড়া ভোটার করতে রাজি হচ্ছে না।

এনআইডি সংশোধান নিয়ে ভোগান্তির এই চিত্র দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছে। অনেকেই সময়মতো এনআইডি না পেয়ে নানা সংকটে রয়েছেন। ত্রুটিপূর্ণ এনআইডি কার্ড ভুক্তভোগীর জন্য যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর তদন্তের নামে ঝুলিয়ে রাখা হয় সংশোধনী কার্যক্রম। কারও সংশোধনী আবেদন আবার দীর্ঘদিন ঝুলন্ত থেকে শেষে বাতিল হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের ভুলের খেসারত যদি সাধারণ জনগণকে দিতে হয়, তাহলে নাগরিকের এ অধিকার নিশ্চিত হবে কোথায়? এমন প্রশ্নে অনেকের। অনেকেই পিতার ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে না পেরে চাকরির সুযোগও হারিয়ে ফেলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  

এদিকে এনআইডি সেবাকে সহজ করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার পরে এনআইডি সেবাকে সহজ করতে ইসি সচিব নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন। গতকালও তিনি রংপুর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেছেন। ইসি সূত্র জানিয়েছে, এনআইডি সেবা সহজ করার জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ইসি সচিবালয়। এর মধ্যে মোবাইল অ্যাপস প্রস্তুত করা হচ্ছে; ইসি সচিবালয়, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে প্রতিদিন কতজনকে সেবা দেওয়া হলো তা অফিস বোর্ডে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হারানো এনআইডির ক্ষেত্রে জিডির কপি দাখিলের নিয়ম বাদ দেওয়া হচ্ছে। ইসির মাঠপর্যায়ে নিজস্ব ওয়াবসাইট করার পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। যাতে নাগরিকরা ওয়াবসাইট থেকে সেবা পাওয়ার সব তথ্য জানতে পারেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব শফিউল আজিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন সেবা সহজ করার জন্য; দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য এবং জনবান্ধব করার জন্য। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। এনআইডি সেবা সহজ করার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা অনলাইনে মিটিং করছি। বৃহস্পতিবার রংপুর অঞ্চল দিয়ে অনলাইন মিটিং শুরু করেছি। এ মিটিংয়ে ৮ জেলা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে সারা দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা এমন মিটিং করব। আমরা এনআইডি, নতুন ভোটার, ভোটার স্থানান্তরসহ অন্যান্য সব সেবা যাতে সহজ করা যায়; নির্বাচন কমিশনের অফিসে যাতে দুবার না আসতে হয় সেই ব্যবস্থা করছি। এ ক্ষেত্রে কেউ যেদিন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করবেন, ওই দিনেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে আবার আসতে হবে। কোনো কর্মদিবসে নাগরিকরা যাতে সেবা না পেয়ে ফিরে না যায় আমরা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করব। তিনি বলেন, এখন যেহেতু কোনো ভোট নেই। তাই আমরা এনআইডিসহ অন্যান্য সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের সব জনবলকে কাজে লাগাচ্ছি। আগামী ৮ অক্টোবরের মধ্যে আমাদের সেবার মান তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

এনআইডি : নাম সংশোধনে পুনঃআবেদনের সুযোগ ইসির : জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) নাম সংশোধন আবেদন বাতিল হলে দ্বিতীয়বার আবেদনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে নিজের নামের পাশাপাশি পিতা-মাতার নামের সংশোধনের ক্ষেত্রেও একই সুযোগ থাকছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই ও সরবরাহ) প্রবিধানমালা-২০১৪ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে এই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন ইসি।

হারানো এনআইডি তুলতে জিডির বাধ্যবাধকতা থাকছে না : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হারিয়ে গেলে নতুন কার্ড তোলার ক্ষেত্রে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এ ছাড়া নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধির সই নেওয়ার বিষয়টি তুলে দেওয়ার পক্ষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ইসির এক সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির আবেদনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা এ জাতীয় জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর নিতে সেবাগ্রহীতাকে বিড়ম্বনা বা হয়রানির মুখে পড়তে হয়। জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষরিত সনদ থাকলে এর প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া অনেক সময় সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে বাড়ি ভাড়ার চুক্তির কাগজপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র চাওয়া হয়, যা সেবাগ্রহীতার পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাকে বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানে দালালের হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় এবং এ ক্ষেত্রে বিকাশ অ্যাপের মতো নিজের ছবি ভেরিফিকেশন করে সহজ অ্যাপ তৈরি করে অনলাইন সেবাকে সহজীকরণ করা যেতে পারে। অন্যদিকে হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র পুনঃমুদ্রণের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার জিডি কপি দেওয়ার বর্তমান নির্দেশনা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একটি জিডি করতে সেবাগ্রহীতাদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

সর্বশেষ খবর