শিরোনাম
রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রশাসনের শৃঙ্খলায় জিরো টলারেন্স

ওয়াজেদ হীরা

প্রশাসনের শৃঙ্খলায় জিরো টলারেন্স

গত মাসে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন সেক্টরে নানা দাবি উঠতে থাকে। দেখা দেয় নানা ধরনের বিশৃৃঙ্খলাও। সেই ঢেউ লাগে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও। দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তাদের তিন ধাপে পদোন্নতির পর আলোচনায় আসে জেলা প্রশাসক হওয়ার দৌড়ঝাঁপের বিষয়টি। ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল ও হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে যায়। এর পর আটজন ডিসির নিয়োগ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। হট্টগোলে জড়িতদের চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দিয়ে গঠিত এক সদস্যের তদন্ত কমিটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাত কর্মদিবস শেষে জমা দেবে রিপোর্ট। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কী আসতে যাচ্ছে সে সুপারিশে, সেদিকে চোখ রাখছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্ত যারাই হোক তাদের বিরুদ্ধে যে সুপারিশমালা আসবে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সেটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশাসনের শৃঙ্খলার স্বার্থে আরও কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকেও। সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সচিবালয়ের ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এখানে দুই পক্ষেরই ভুল ছিল। কর্তৃপক্ষ যেটি করেছে সেটিও একটা বড় ভুল। কর্তৃপক্ষ যদি ভুল না করত তাহলে পরের ঘটনাটি হয়তো ঘটত না। ডিসি হওয়া নিয়ে পরের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা অত্যন্ত অন্যায় করেছে। কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

এদিকে, কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্যসেবার সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, আমাকে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আমি সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন মিডিয়া এবং নানাভাবে তথ্য পাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের কথা শুনছি। যাচাইবাছাই করে সুপারিশ জমা দেব।

জানা গেছে, ইতোমধ্যেই কমিটি বিভিন্ন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। গত রবিবার চার কর্মকর্তা তদন্ত কমিটির কাছে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। এরা হলেন- নুরজাহান খানম, জসিম উদ্দিন, রেবেকা খানম এবং সাইফুল ইসলাম। তারা ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। মঙ্গলবার নুরুল করিম ভূঁইয়া, সগীর হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শাহীনুর আলমের ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে একজন উপস্থিত হতে পারেননি। এরা ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও ডাকব। তাদের ব্যাখ্যাও শুনবে তদন্ত কমিটি। এ পর্যন্ত ১৫ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। আমরা সুপারিশমালা জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করব। এদিকে, তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দেওয়া কর্মকর্তাদের একজন বলেন, আমাদের কাছে কমিটি যা জানতে চেয়েছে, আমি তার জবাব দিয়েছি। কমিটি একেক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫-২০ মিনিট সময় নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত চলমান। প্রশাসনে মারামারি একটা খারাপ নজির হয়ে থাকল। এখনই এসব লাগাম না টানলে সামনে অন্ধকার আমাদের জন্য। জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, সিনিয়র স্যারকে দিয়ে কমিটি হয়েছে, এটা ভালো উদ্যোগ এবং জরুরি ছিল। আমরা মনে করি দোষ যারই হোক, কর্মকর্তাদের প্রতিবাদের ভাষা কখনো হাতাহাতি হতে পারে না। দোষীকে ছাড় দেওয়া মানে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা। জনপ্রশাসনসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময় আমাদের সহযোগিতা করা দরকার। সেখানে আমরা যদি এমন ঘটনা ঘটাই, সেটা অন্যদের কাছে খারাপ উদাহরণ তৈরি করবে। সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সচিবালয়ের হট্টগোলের ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ছিল। উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর ২৫ জেলার ডিসি দিয়ে পরে আবার একজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর ৩৪ জেলার ডিসি নিয়োগ দেওয়া হলে ডিসি হতে না পারা কর্মকর্তাদের হট্টগোলের মধ্যে আট জেলার ডিসি নিয়োগ বাতিল করা হয়।

সর্বশেষ খবর