শিরোনাম
সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

আবার মুখর ক্যাম্পাস

ছাব্বিরুল ইসলাম

আবার মুখর ক্যাম্পাস

দীর্ঘ ১১২ দিন বন্ধ থাকার পর শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা ফিরেছেন ক্লাসে। তবে কিছু বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ব্যতিক্রম চিত্র। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথারীতি শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রাণসঞ্চার হয় ক্লাসরুমগুলোতে। ক্লাসে ফেরার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আন্দোলনের সময় থেকে আন্দোলন পরবর্তী সময়টা অনেক মানসিক চাপে কাটাতে হয়েছে। আমি ৬ আগস্টই হলে ফেরত আসি। এতদিন অপেক্ষা করছিলাম ক্লাস খোলার। ক্লাসে ফেরার পর অনেক স্বস্তি লাগছে। ক্যাম্পাসটা আবার প্রাণ ফেরত পেয়েছে।

আরেক শিক্ষার্থী নাহিদা সুলতানা বলেন, আমি মিরপুরে থাকি। মাঝেমধ্যেই ক্যাম্পাসে চলে আসতাম। তবে কেমন যেন শূন্যতা অনুভব হতো। ঘরে বসে থাকতেও আর ভালো লাগছিল না। ক্লাসে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে বসেছিলাম। অবশেষে প্রাণের ক্যাম্পাসে সবাইকে পেয়ে ভালো লাগছে।

অনুষদগুলোর ডিনসূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের আওতাভুক্ত বিভাগগুলোতে সুষ্ঠুভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এখন একটু কম। কিছুদিনের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি  দাওয়া ছিল সেগুলো সামর্থ্য অনুযায়ী মেনে নেওয়া হচ্ছে যার ফলে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পূর্বে যে আলোচনা ছিল শ্রেণি কার্যক্রমে তার কোনো প্রভাব নেই।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখনো কয়েকটি বিভাগে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ আছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ (আংশিক বন্ধ), আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ওশেনোগ্রাফি বিভাগে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ আছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে চারজন শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে ক্লাস পরীক্ষা বয়কট করেছে শিক্ষার্থীরা। শান্তি সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একাংশ বিভাগটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে আরেক অংশ শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। ওশেনোগ্রাফি বিভাগেও কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের অবনতি ঘটায় ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এমন সিদ্ধান্তে অনুষদগুলো চাপের মুখে পড়লেও বিভাগ ও প্রশাসনের সহায়তা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ডিন ও সংশ্লিষ্টরা।

আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক কাজী মতিন আহমেদ জানান, ক্লাস শুরু হয়েছে তবে বেশির ভাগ বিভাগেরই পরীক্ষা চলছে। ৩০ তারিখ থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা সচেষ্ট। ওশেনোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রথমে বিভাগীয় পর্যায়, পরবর্তীতে অনুষদ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো সামর্থ্য অনুযায়ী মেনে নেওয়া হবে। জানা যায়, কলা অনুষদে কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীরা আগে ক্লাস বয়কটের চিন্তা করলেও পরবর্তী সময়ে বিভাগ ও অনুষদ মিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং ইসলাম শিক্ষা ও উর্দু বিভাগে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করায় শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি সকাল থেকে অনুষদের কয়েকটি বিভাগ পরিদর্শন করেছি। উপাচার্যও এসেছিলেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসন্তোষ ছিল সেটি আলোচনা ও কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা মিটিয়ে নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একটু কম তবে আশা করি সেটিও ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটেও (আইবিএ) অনুপস্থিত ছিলেন সিংহভাগ শিক্ষার্থী।

জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে খোঁজ নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ আবদুল্লাহর। এমনকি সরকারের পতনের ১ মাস পর শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তার দেখা মেলেনি। তিনি গত ৩০ জুন আইবিএর পরিচালকের দায়িত্ব নেন কিন্তু এই সময় থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা বারের জন্যও সাক্ষাৎ করেননি। প্রথম ছুটি ১১-২১ সেপ্টেম্বর এবং এরপর তিনি ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি চেয়েছেন।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক শাকিল হুদা জানান, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ আজ (রবিবার) ক্লাসে উপস্থিত হয়নি। ইনস্টিটিউটের পরিচালক তাদের সঙ্গে দেখা না করায় তারা ক্ষুব্ধ। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি আছে যেগুলো মূলত পলিসিগত দাবি। সেগুলো পূরণ করতে হলেও আসলে পরিচালকের প্রয়োজন। তবে তিনি না থাকায় কিছুই করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা এত শর্ট নোটিসে ক্লাসে ফিরতে চাচ্ছে না, তারা অন্তত এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। এই সার্বিক বিষয় নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বিভিন্ন বিভাগে ক্লাসরুম পরিদর্শনের সময় বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর আমরা ক্লাসে ফিরতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। যেসব সমস্যা এখনো রয়ে গেছে সেগুলো খুব দ্রুতই সমাধান করার চেষ্টা করব। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেটি আমরা খুব দ্রুত পূরণের চেষ্ট করব। আমরা এখনো কিছু বিভাগের ক্লাস শুরু করতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা এসব প্রতিবন্ধকতা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারব। এ ছাড়াও তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর