মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

আন্দোলনে উত্তাল শিল্পাঞ্চল

অবরোধ বিক্ষোভ, বন্ধ ৫২ কারখানা

প্রতিদিন ডেস্ক

আন্দোলনে উত্তাল শিল্পাঞ্চল

সাভারে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সেনা সদস্যরা

বকেয়া বেতনের দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর ও টঙ্গী শিল্পাঞ্চল। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়ার ৫২টি কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে মালিকপক্ষ। এক কথায় বলতে গেলে এলাকাজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

সাভার : বকেয়া বেতনের দাবিতে আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ প্রদর্শন ও কর্মবিরতি পালন করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। এতে আশুলিয়ায় ৫২টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। গতকাল দুপুরে শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুরে জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ৫২টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে মালিকপক্ষ। এগুলোর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রম আইন মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। বেশকিছু কারখানায় এ-জাতীয় নোটিশ দেখা গেছে। এ ছাড়া জেনারেশন নেক্সট নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। হা-মীম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের গেটে দেওয়া একটি নোটিশে লেখা রয়েছে, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, অ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে উল্লিখিত কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে সড়ক অবরোধ করা শ্রমিকরা জানান, অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি করলেও তারা উৎপাদন চালু রেখেছেন। অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এসে ঝামেলা করলেও সব শ্রমিক কাজ করেছে। কিন্তু আমাদের কারখানা বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আগস্টসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছেন না। সারা মাস কাজ করে বাড়িওয়ালা ও দোকান মালিকদের লাঞ্ছনা সহ্য করতে হচ্ছে। এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে। শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আবারও এই অঞ্চলে বেশকিছু তৈরি পোশাক কারখানা মালিকপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করেছে। ৫২টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় বন্ধ রাখে।

সাভার সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির বলেন, সকালে নরসিংহপুর এলাকায় একটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানো হয়।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, আশুলিয়ায় ৫২টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ৪৩টি এবং বাকি ৯টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

গাজীপুর : সদর উপজেলার বাঘের বাজার গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড বন্ধ করে আন্দোলন করেছেন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিকদের কর্মসূচির কারণে সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওই অংশের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল হালিম জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করে মহাসড়ক থেকে চলে গেলে যান চলাচল শুরু হয়। শ্রমিকদের আজ (মঙ্গলবার) যথারীতি কাজে যোগদানের কথা রয়েছে।

টঙ্গী : টঙ্গীতে গতকাল সিজন্স ড্রেসেস লিমিডেটের শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ছুটির টাকাসহ চার দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া টঙ্গী পাগাড় এলাকায় শিশির নিটিং অ্যান্ড ডাইং কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ছুটির টাকা দেই-দিচ্ছি বলে না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকরা বাসাভাড়া ও দোকানের বাকি দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। গতকাল সকালে কাজে যোগ দিয়ে বকেয়া বেতন চাইলে দিতে অস্বীকার করে মালিকপক্ষ। পরে সকাল ৯টায় শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে উৎপাদন বন্ধ করে কারখানা থেকে বেড়িয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এ ব্যাপারে গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি, সমাধান হয়ে যাবে। বিষয়টি শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

সর্বশেষ খবর