মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
নিরাপদ খাদ্যের গবেষণা প্রতিবেদন

সবজি ফলমূলে বিষাক্ত উপাদান

মিলেছে ভারী ধাতু, কীটনাশকের উপস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাকসবজি ও ফলে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি জানতে পৃথক দুটি গবেষণা পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এসব গবেষণায় সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ও ফলে মিলেছে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ।

গতকাল রাজধানীতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ সেমিনারে নয়টি সবজিতে হেভি মেটালের উপস্থিতি এবং চারটি ফলে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ উপস্থিতির ফল জানানো হয়। সম্প্রতি সবজিতে রাসায়নিকের মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। তাঁরা বাজার থেকে নয় ধরনের সবজি সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল আলু, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, টম্যাটো, লালশাক, পটোল, বাঁধাকপি, শসা ও মটরশুঁটি। গবেষণায় উঠে এসেছে-লালশাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। যেখানে ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ১৯০ মাইক্রো গ্রাম প্রতি কেজি, সেখানে লালশাকে পাওয়া গেছে ৭০৪.৩২ মাইক্রো গ্রাম প্রতি কেজি। বেগুনে পাওয়া গেছে ২৭৫.৬৬ মাইক্রো গ্রাম, ঢ্যাঁড়শে ৩৪৯ মাইক্রো গ্রাম ও টম্যাটোতে ১৯৫ মাইক্রো গ্রাম প্রতি কেজি। গবেষণা বলছে, ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় নারায়ণগঞ্জে। আর্সেনিক দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় শেরপুরে। ক্যাডমিয়ামের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন নারীরা।

একইভাবে ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে শিম, শসা, ঢ্যাঁড়শ, পটোল ও লালশাকে। লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢ্যাঁড়শ, পটোল, টম্যাটো, লালশাকসহ নয়টি সবজিতে। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, টম্যাটো ও লালশাকে।

গবেষকরা জানান, যেসব সবজিতে হেভি মেটাল রয়েছে সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এদিকে ফলের গবেষণা উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন প্রধান। তিনি ও তাঁর গবেষক দল আম, লিচু, বরই ও পেয়ারার প্রতিটির ৮০টি করে মোট ৩২০টি নমুনা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষে তাঁরা ৩৯টি নমুনায় কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি খুঁজে পান, যা মোট নমুনার ১২.১৯ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে লিচুতে (১৮.৮ শতাংশ)। সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে আমে (৮.৮ শতাংশ)। ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া থেকে তিনি এসব নমুনা সংগ্রহ করেন। কীটনাশকযুক্ত নমুনাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার (এমআরএল) চেয়ে অতিরিক্ত পাওয়া যায় ৩০টি নমুনায়।

সমস্যা উত্তরণে গবেষক দল কৃষককে নিয়মিত মনিটরিং, উত্তম কৃষিচর্চার (GAP) ওপর জোর দেওয়া, কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর আরোপ করার পরামর্শ প্রদান করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. মোহাম্মদ সোয়েব। আলোচক ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক ড. শামশাদ বেগম কোরাইসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন। সভাপতিত্ব করেন বিএফএসএ সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফা।

সর্বশেষ খবর