মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

মনোযোগ অর্থনৈতিক কূটনীতিতে

মানিক মুনতাসির

দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক কাঠামো সংস্কারের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে; যা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। এদিকে দেশের ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ থাকায় গ্রাহকের আস্থা আরও কমেছে। এ আস্থার সংকট শুধু দেশে নয়, বিদেশেও ছড়িয়েছে। এ সংকট কাটাতে না পারলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করাটা দুরূহ হবে বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে সরকার।

এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম মাসেই বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের সহায়তা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। বাজেট সহায়তা ছাড়াও বিশ্বব্যাংক আরও ২ বিলিয়ন এবং আইএমএফ ৩ বিলিয়ন ডলার দিতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এদিকে দেশ থেকে বিভিন্ন সময় পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা। এটা করতে পারলে তা অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক সফলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের চলমান সাধারণ অধিবেশনেও অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক অর্থনীতির একটা প্রভাব থেকেই যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ঋণ ও সহায়তার আওতা বাড়ানো, ঋণ পরিশোধের সময় বৃদ্ধিসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে; যা হবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে; যেটি বিরল বৈঠক। সাধারণত জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালে নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় না। এ ধরনের বৈঠকগুলো হয় ওয়াশিংটনে। তাই বাইডেনের সঙ্গে ইউনূসের এ বৈঠক রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে কূটনৈতিক মহলে। এটাকে বিশ্ব পরিম লে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য কূটনৈতিক অর্থনীতির ব্যাপক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে আজ ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। ওই দলটি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা করবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, এনবিআরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে আইএমএফের সদর দপ্তরে। এ ছাড়া আগামী মাসে ওয়াশিংটনে হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সভা। সেখানে যোগ দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সেখানেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অনেক বিষয়ের নেগোসিয়েশন (সমঝোতা) হবে বলে জানা গেছে। অর্থ বিভাগের এক সূত্র জানান, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে। এজন্য শুরুতেই বাজারব্যবস্থার ওপর নজর দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বহির্বিশ্বে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য সব উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এজন্য বার্ষিক বাজেট ঘাটতি ও ডলার সংকট কাটিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে বহুমুখী তৎপরতায় নেমেছে সরকার। চীন, ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএসএইড, ইউকেএইডসহ সব উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এ সরকার।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফেসভ্যালু (পরিচিতি) তো অবশ্যই একটা বড় ফ্যাক্টর। সারা বিশ্বে তাঁর যে পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা তা কাজে লাগাতে পারলে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক যে কোনো প্ল্যাটফরমে রোহিঙ্গা সংকট, আর্থিক সংকট এমনকি বিশ্বের নানা ধরনের সংকট সমাধানে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আমরা হয়তো তার কিছুটা প্রতিফলনও দেখতে পাব।’

সর্বশেষ খবর