শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

রক্ত সংকটে জটিল রোগীরা

কমেছে স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুই মাস ধরে চলছে সংকট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রক্ত সংকটে জটিল রোগীরা

রক্ত সংগ্রহ কমে আসায় বিপাকে পড়েছেন থ্যালাসেমিয়াসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীরা। রক্ত সংকটে বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীবন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে কমেছে স্বেচ্ছায় রক্তদান। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পাশাপাশি আগুনে পোড়া, কিডনিসহ জরুরি অপারেশনে রক্ত পেতেও ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর ১২-১৫ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি হলে থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন আর ওষুধই একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে। থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের রক্তরোগ; যা বংশগতভাবে প্রবাহিত হয়। থ্যালাসেমিয়া রোগীকে সারাজীবন অন্যের রক্ত নিতে হয়। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর জীবন বাঁচাতে মাসে এক থেকে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। দেশে এখন থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটি হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা. এ কে এম একরামুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন নিরাপদ রক্ত। প্রতি মাসে থ্যালাসেমিয়া হাসপাতালে ৮০০ থেকে ১ হাজার ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন হয়। এ রক্তের বেশির ভাগ জোগান দেন স্বেচ্ছাসেবক তরুণরা। রোগীরা অনেক সময় স্বজনদের নিয়ে আসেন রক্ত দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্ট, কোয়ান্টাম, পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের মতো নির্দিষ্ট কিছু ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নেওয়া হয়। গত দুই মাসে রক্ত সংগ্রহ কমে আসায় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্ত সংগ্রহে সংকট দেখা দিচ্ছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পুরোদমে চালু হলে আশা করছি সংকট কেটে যাবে।

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পাশাপাশি কিডনি ডায়ালাইসিস, বিভিন্ন ধরনের অপারেশন, আগুনে পোড়া মানুষের চিকিৎসায় রক্তের প্রয়োজন পড়ে। স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা মানুষের জীবন বাঁচানো আন্দোলনের দূত। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে। বাকিটা আত্মীয়স্বজন ও পেশাদার রক্তদাতাদের মধ্য থেকে আসে। স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশ ব্লাড ব্যাংকসহ বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু গত তিন মাসে আন্দোলন সংগ্রামে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের বড় অংশ বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রক্ত সংগ্রহে ক্যাম্পও পরিচালনা করতে পারছে না হাসপাতাল বা সংগঠনগুলো। ফলে কমে এসেছে রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ। এর মধ্যে হাসপাতালে আহত রোগীদের জরুরি অপারেশনেও রক্ত জোগাড় করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসায় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়েছে। যারা ওই সময়ে রক্ত দিয়েছিলেন, তারা চার মাসের আগে আর রক্ত দিতে পারবেন না। এফেরেসিস পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এখন অনেক রক্তদাতাই এই পদ্ধতি ছাড়া রক্ত দিতে আগ্রহবোধ করছেন না। দেশের কোনো হাসপাতালের সুনির্দিষ্ট রক্তদাতার গ্রুপ নেই। তাই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকসহ নানানভাবে রক্ত সংগ্রহ করে রোগীর স্বজনরাই। সরকারিভাবে রক্তদাতা গ্রুপ তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই, ফলে চাপ তৈরি হয় বেসরকারি নানান সংগঠনের ওপর।’ তিনি আরও বলেন, ‘রক্তদাতাদের কোনো সম্মাননা না থাকায় রক্তদানের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেক রক্তদাতা। আবার দেশে কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র না থাকায় রক্তদান করতে হয় যে জায়গায় রোগী রয়েছে সেখানে গিয়ে। এই যাতায়াত খরচ এবং সময় রক্তদাতাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে যায়। রক্তের ব্যবহার খুবই হিসাব করে করা উচিত। হাসপাতালগুলোতে সংরক্ষিত রক্ত পরিপূর্ণ ব্যবহার করা গেলে নতুনভাবে রক্ত সংগ্রহের সম্ভাবনা কমে যায়। রক্তদাতার সংকট ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়।’

সর্বশেষ খবর