শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভিয়েতনামের নারকেল বাগান

সঞ্জয় দাস লিটু, পটুয়াখালী

ভিয়েতনামের নারকেল বাগান

ভিয়েতনামের দ্রুত বর্ধনশীল খাটো জাতের ফুল ফলে ভরা নারকেল বাগান গড়ে উঠেছে পটুয়াখালী জেলার উত্তাল আগুনমুখার তীরে। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে বাগানটি গড়ে তুলেছেন কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের মাসুদ চৌকিদার। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নিজের পৈতৃক এক একর জমিতে একশটি চারা রোপণ করে বাগান শুরু করলেও ইতোমধ্যে তার এ বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে নারকেল চারা ও নারকেল বাজারজাত করে পেয়েছেন সফলতা। গত ৮ বছরে তিনি নারকেল চারা বিক্রি করেছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। আর এই বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার আশপাশের মানুষসহ অন্য উপজেলার মানুষও। বাগানটি দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড়              করছেন দর্শনার্থীরা। ফলদ এ গাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছোট-বড় বাগানও করেছেন অনেকে। জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে নারিকেল চাষাবাদ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভিয়েতনামের দ্রুত বর্ধনশীল খাটো জাতের নারিকেল সিয়াম ব্লু ও সিয়াম গ্রিন-এর ১০০টি নারিকেল চারা মাসুদ চৌকিদারকে দেয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাসুদ চৌকিদার ২০১৬ সালে নারিকেল চারা সংগ্রহ করে কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের পাটুয়া গ্রামে আগুনমুখা নদীর তীরে নিজের এক একর জমিতে প্রথম পর্যায়ে ২৪টি চারা রোপণ করেন। পরে তিন কিস্তিতে ১০০ চারা রোপণ করেন। রোপণের আড়াই বছরের মধ্যেই গাছগুলোতে নারিকেল আসে। মাসুদ চৌকিদারের বাগানে দেখা যায়, উত্তাল আগুনমুখা নদীর তীরে বাড়ির পাশেই বাগানটিতে সারি সারি নারিকেল গাছ। সব গাছেই পরিপূর্ণ ফুল, কড়ি, ডাব ও নারিকেল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যে কোনো মানুষের। নদীর পাড়ে বাগানটি হওয়ায় সেচের পরিবর্তে জোয়ার-ভাটার লবণাক্ত পানি আসা-যাওয়া করে বাগানে। বর্তমানে বাগানে প্রতিটি গাছে ১৫০ থেকে ২০০টি ফল আসে। ইতোমধ্যে গাছ থেকে ৭ হাজার ৫০০ চারা পাঁচ শ ও সাত শত টাকা করে ৪৫ লাখ টাকা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। মাসুদ চৌকিদার জানান, ‘উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের কবল থেকে গাছ ও ফল রক্ষায় ভিয়েতনামের খাটো জাতের এ নারিকেল গাছ বেছে নেই। দেশীয় জাতের নারিকেল গাছে ফল আসতে আসতে ৭-৮ বছর লাগলেও রোপণের দুই বছরের মধ্যেই ফুল-ফল চলে আসে খাটো জাতের এই নারিকেল গাছে। সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে সব গাছেই নারিকেল হয়। সব ধরনের মাটিতেই এ গাছ লাগানো সম্ভব। ওপেন পলিনেটেড জাতের কারণে বীজ থেকেই চারা উৎপাদন করা হয়। বাগানটি শুরু করতে দেড় লাখ টাকা খরচ করলেও এখন প্রতি বছর খরচ হয় মাত্র ৪০ হাজার টাকা। আমি বর্তমানে ৪০ লাখ টাকা লাভবান। গাছ যখন পূর্ণাঙ্গ হয় তখন বছরে এই বাগান থেকে চারা ও নারিকেল বিক্রি করে ৫-৬ লাখ টাকা পাওয়া সম্ভব। বাগানে নারিকেল চাষ করে সফলতা পেয়েছি। আর এসব কারণে গ্রামের অন্যরাও এখন এই নারিকেল চাষে উৎসাহিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর