মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

নির্ঘুম রাত ভাঙন আতঙ্কে

কয়েকটি জেলা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

প্রতিদিন ডেস্ক

নির্ঘুম রাত ভাঙন আতঙ্কে

লালমনিরহাটে বন্যার পানিতে তলিয়েছে সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে বন্যায় পানি কমছে। তবে ভাঙন-আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের মানুষ। গতকাল সকাল থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো তলিয়ে রয়েছে চরাঞ্চলের আমন খেত ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পথঘাট। ফলে এখনো পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

তিস্তার পানি কমায় ইতোমধ্যে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ী, টেপাখরিবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে নদী ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেজবাহুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ৩০ টন চাল ও ১ হাজার ৫৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবকটি (৪৪) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পানি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর সার্বক্ষণিক রাখা হচ্ছে। এখন আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই।

কুড়িগ্রাম : উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গত তিন দিন ধরে কুড়িগ্রামের ধরলা ব্রহ্মপুত্র দুধকুমার নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছিল রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ। সকাল থেকে পানি কমে যাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনের।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি কমে বিপৎসীমার ৩০ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ধরলাসহ সবকটির পানি বিপৎসীমার নিচে নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীর গতিয়াশাম ও উলিপুর একটি স্কুল নদী ভাঙনের মুখে পড়ার খবর পেয়েছি। ওসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাট : উজানের ঢল ও টানা কয়েকদিনে বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করছে বানভাসি মানুষ। তবে বন্যার কারণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১১টি এবং আদিতমারী উপজেলার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমা ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে গত রবিবার সকালে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রাত থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। উপজেলার মানুষ ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করলেও লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও আদিতমারী উপজেলার কিছু বানভাসি মানুষ এখনো ঘরবাড়িতে ফিরতে পারেনি। বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অপরদিকে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বন্যার্ত এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, তিন দিনের বন্যায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এদিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর নামক স্থানে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই চলছে ট্রেন।

রংপুর : রংপুরে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি ৪৯ সেন্টিমিটার কমেছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচর থেকে পানি সরে যেতে শুরু করেছে। তবে এখনো কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। সাময়িক বন্যায় তিস্তাপাড়ে আবাদ করা ধান খেত, মরিচ ও বাদামের খেত পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করে। গতকাল সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি কমতে থাকে। বিকাল ৩টায় এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত নেই। ফলে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত কমছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর