মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

শাস্তি পাচ্ছেন ১৭ উপসচিব

ডিসি নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল দাবিতে বিক্ষোভ ও হট্টগোলের ঘটনায় ১৭ উপসচিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে আটজনকে গুরুদণ্ড, চারজনকে লঘুদণ্ড এবং পাঁচজনকে তিরস্কারের সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। এ ছাড়াও ৩ কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়নের বিষয়টি ভিত্তিহীন ও গুজব বলেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। গতকাল সচিবালয়ে ভুয়া চেক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

ডিসি নিয়োগে হট্টগোলকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘প্রশাসনের শৃঙ্খলায় জিরো টলারেন্স, দায়ীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে কঠোর ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’। সরকার ৯ সেপ্টেম্বর দেশের ২৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়ার পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর আরও ৩৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। ডিসি হিসেবে নতুন নিয়োগ পাওয়া এই ৫৯ জনকে নিয়ে তীব্র আপত্তি এবং ক্ষোভ জানিয়ে একদল কর্মকর্তা সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় হট্টগোল করেন। সেই ঘটনা প্রসঙ্গে গতকাল ব্রিফিংয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর আমাদের মন্ত্রণালয়ে একটি অসন্তোষ হয়েছিল। সেটার জন্য এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। তার প্রতিবেদন পেয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও প্রতিবেদন এবং সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনটি পর্যায়ে কমিটি সুপারিশ করেছে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আটজনের বিষয় বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে গুরুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া চারজনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে বিধিবিধান অনুযায়ী লঘুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। আর পাঁচজনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাদের শাস্তি হিসাবে তিরস্কার করা যেতে পারে। তাদের সাবধান করা, যেন ভবিষ্যতে এমনটি না করেন। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতি ও মানুষ জানতে চায়। আমি ডিসি হতে পারিনি, সেজন্যই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এরকম একটা আন্দোলনের ঘটনা কেউ ভালোভাবে নেয়নি। সত্যি কথা বলতে কি জনগণও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। সিনিয়র সচিব বলেন, অনেকে বলছেন এগুলো যদি কঠোর হস্তে দমন না করেন, ব্যবস্থা না নেন, আমাদের প্রশাসন ভেঙে পড়বে, শৃঙ্খলা থাকবে না। প্রশাসনের একটি বড় দিক হলো শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় যা যা করার সেটি করা হবে। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আপনারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ড. মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘একজন যুগ্ম সচিব ছিলেন, তাকে এরই মধ্যে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে বদলি করা হয়। উনি কিছু ওভার অ্যাক্ট করেছিলেন, এজন্য সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ১৭ জনের সবাই উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলে জানিয়েছেন তিনি।

৩ কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়নের বিষয়টি গুজব : ৩ কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়নের বিষয়টি ভিত্তিহীন ও গুজব বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। তিনি বলেন, একটি গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তার পরিপ্রেক্ষিতে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই চেকের বিষয়ে যে খবর প্রচার হয়েছে সেটি তদন্ত করে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সিনিয়র সচিব বলেন, ওই পত্রিকাটি একটি বড় ধরনের গুজব ছড়িয়েছে। ছবি দিয়ে একেবারে বড় আকারের নিউজ করেছে। এ ব্যাপারে অনুরোধ করব, একটা খবর প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে। তিনি বলেন, ‘এটা কিছুই ছিল না। একটা ভুয়া খবর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মির্জা সাবেদ আলীর নামে যে চেক সেটা একটা ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন পদ্মা ব্যাংকের। ২ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্টটি খুলেছিলেন ২০২৩ সালে। যেদিন তদন্ত করা হয়, সেই অ্যাকাউন্টে শূন্য ব্যালেন্স ছিল। কোনো টাকাই নেই।’এ ধরনের নিউজ করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে কী লাভ, এমন প্রশ্ন তুলে সিনিয়র সচিব বলেন, ব্যাংকের ম্যানেজার ফর্ম পূরণ না করে অ্যাকাউন্টটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তিনি আদৌ থাকেন না। ওই দিন থেকে ওই লোকের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। যে ৩ কোটি টাকার চেক দিতে পারেন, সে কি এত হালকা হবেন? সচিব আরও বলেন, ‘এক কথায় বলে দিতে পারি, ভুয়া একটি বিষয়কে জাতীয় পর্যায়ে এনে মানুষকে বিব্রত করা হয়েছে। এতে কেউ ছোট হয় না, দিনশেষে যারা এটা করেছেন তারাই ছোট হয়েছেন।’ সচিব আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আমরা অনুরোধ করব সব ব্যাংকে যেন নির্দেশনা দেয়, নতুন করে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে কী কী নিয়ম মানা হবে। আর এ ধরনের একটা ভুয়া লোক এত বড় একটি ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে, এ ব্যাপারে তার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করছি। আমরা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে রিকুয়েস্ট লেটার দেব, এই মন্ত্রণালয় যাতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়।’

সর্বশেষ খবর