বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

আলোচনায় ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল

বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা, প্রকাশ্যে কিছুই বলছেন না কেউ

রফিকুল ইসলাম রনি ও ছাব্বিরুল ইসলাম

আলোচনায় ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল

আর দুই দিন পর ৫ অক্টোবর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই মাস পূর্তি হবে। কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সমমনা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এখন পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির উন্মেষ ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জেলায় সফর এবং মতামত গ্রহণ করছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। কেন্দ্রীয়ভাবেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করছেন তারা। তবে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কেউ কিছু বলছেন না।

নতুন দল গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সমন্বয়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমরা আগে জনমত যাচাই করছি। মতামত গ্রহণ করছি। কিছু সুপারিশ আসছে। সেগুলো নোট রাখছি। সময়ই বলে দেবে কখন কী করতে হবে। তারা বলেছেন, দুই রাজনৈতিক দলের ওপর দেশের মানুষ ক্লান্ত-বিরক্ত। এ দুই রাজনৈতিক শক্তির বাইরে আমাদের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে। এ জন্য বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি (নতুন দল গঠন) নিয়ে আলোচনা চলছে। এ মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গঠনের আগে সাধারণ জনগণের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে চান তারা। রাজনৈতিক দল এখনো প্রকাশ্যে না আনলেও থানা জেলায় আলাদা কমিটি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি হবে। এখন অনেক ভুয়া সমন্বয়ক বের হচ্ছে। সে কারণে জেলা পর্যায়ে কমিটি অনুমোদিত থাকলে শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে।’

এ ছাত্রনেতা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ কমিটিতে থাকতে পারবে না। ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের কেউ কমিটিতে এলে আগের ছাত্র সংগঠন ছেড়ে আসতে হবে। একটি কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে।

জানা গেছে, গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে নতুন দল গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মূলত দেশের সব জায়গায় সংস্কার আনতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, মূলত এ বছর জুন মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে শুরু হয় সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়ন। পরে তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। সর্বশেষ গণ অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর কয়েক দিনের মাথায় ছাত্র-জনতার চাওয়ার মুখে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও রয়েছেন। গত ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণের পরই এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি মনে করে তরুণরাই রাষ্ট্রের হাল ধরবে তবে জনগণের সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য তরুণরা প্রস্তুত আছে।’ বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি বা নতুন দল গঠনের লক্ষ্যে এখন সমন্বয়করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত কেমন সাড়া পাওয়া যায়, মানুষের আগ্রহ কেমন, কী দাবি-দাওয়া আছে তাদের কাছে- এসব নিয়ে কথা বলছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে জেলায় জেলায় গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনে নিহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন তারা। রাজনৈতিক দল গঠনে সাড়াও মিলছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মতবিনিময় সভার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কথা শোনা এবং আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ। মানুষকে সংগঠিত করা এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কাজ করবে। জেলা ও উপজেলায় কমিটির ব্যাপারে এখনো আলোচনা চলছে।’

পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনাস্থা এবং গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে উত্থান হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন দল তৈরি হলে তা জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র- সর্বত্র পরিবারতান্ত্রিক ধারা বেশ শক্ত অবস্থায় রয়েছে। রাজনীতিকে সেখান থেকে সরিয়ে ‘গণতান্ত্রিক ধারায়’ আনার বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হবে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, তারা যা কিছু করবেন, ছাত্র-জনতার মতামতের ভিত্তিতেই হবে। এ জন্য সম্ভাবনা যাচাইবাছাই নিয়ে কাজ করছে একাধিক টিম। ভিতরে ভিতরে অনেক অগ্রগতি হলেও তারা এখনো ঘোষণা করতে চান না।

সমন্বয়ক আবদুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এটা যতদিন থাকবে, জাতীয় প্ল্যাটফরম হিসেবেই থাকবে। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সবাই আন্দোলনে এসেছে, কোনো ঝামেলা হয়নি। আন্দোলন ইনক্লুসিভ ছিল, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এসেছে; ছাত্রলীগ থেকেও অনেকে এসেছে; সাধারণ জনতা এসেছে। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতি ভিন্ন হয়েছে। ‘সমন্বয়ক’ নামের বিতর্ক ঠেকাতে এই নামে কোনো পদ থাকবে না কমিটিতে। আহ্বায়ক, সদস্য সচিব পদ থাকবে কমিটিতে।’ কারণ হিসেবে তিনি জানান, যার যার মতাদর্শ অনুযায়ী কাজ করা শুরু করেছে। এ কারণে আলাদা আলাদা গ্রুপ হয়েছে। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির আলাদা গ্রুপ করেছে। অনেকে অপকর্মে জড়াচ্ছে; কিন্তু তারা সমন্বয়ক নামধারী। সাংগঠনিক পরিচয় থাকলেও নাম হয় অমুক সমন্বয়ক চাঁদাবাজি করছে ইত্যাদি। সব কমিটি ভেঙে দিয়ে লাভ হচ্ছে না। আবার কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। তাই জেলাভিত্তিক বা উপজেলাভিত্তিক কমিটি দেওয়ার কথা ভাবছি।

সর্বশেষ খবর