বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা
আর্থিক খাত সংস্কার

সময় বেঁধে দিল আইএমএফ

মানিক মুনতাসির

সময় বেঁধে দিল আইএমএফ

► বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে ওয়াশিংটনের বার্ষিক সভায়, সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে প্রয়োজনে আরও তহবিল দেবে সংস্থাটি

► বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কাজে পরিচালকদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নীতি করার সুপারিশ

 

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারে আবারও সময় বেঁধে দিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করে তাতে সমর্থন জানিয়েছে সংস্থাটি। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নীতি এবং কাঠামোগত সংস্কারগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন হলে তাও দিতে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযুক্ত বিষয়গুলোর মীমাংসা করা এবং এ-সংক্রান্ত নীতিগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে জোর সুপারিশ করেছে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কাজে পরিচালকদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নীতি করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। অন্যদিকে আর্থিক খাতের সংস্কারে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপগুলোর বিস্তারিত ২১-২৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় বিস্তারিত তুলে ধরবে বাংলাদেশ। অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। এবারের সফরটি অন্যান্য বছরের তুলনায় ছিল ভিন্ন রকম। যেহেতু একটি নতুন সরকার দেশ পরিচালনায় দায়িত্বে রয়েছে, এ সরকারের রাজনৈতিক কোনো এজেন্ডাও নেই। এ ছাড়া দেশ সংস্কারের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে কাজ করছে। এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আইএমএফের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। সফরের এ সময়ে তারা সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছে। ঢাকা ছাড়ার প্রাক্কালে এসব পরামর্শ ও সময়সীমার কথা বলে গেছে সরকারকে। প্রতিনিধি দলটি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয়র সঙ্গে বৈঠকের সময় তাদের এসব প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের জন্য আর্থিক খাতে কার্যকর সংস্কার আনতে এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করে আইএমএফ।

এদিকে আইএমএফ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় পরবর্তী কিস্তি পেতে বাংলাদেশকে যে ৩৩টি শর্ত পূরণ দিয়েছিল সেগুলোর কথাও বলে গেছে প্রতিনিধি দলটি। রিজার্ভ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনা, রাজস্ব খাতের সংস্কার ও রাজস্ব বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব-এই চারটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নতুন করে।

আগের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে সামাজিক ব্যয় বাড়ানো, রাজস্ব আয় বাড়ানো, মুদ্রানীতি কাঠামোকে আধুনিকীকরণ এবং বিনিময় হারের নমনীয়তা বাড়ানো, সরকার আর্থিক খাতের দুর্বলতা কমাতে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আরও ভালোভাবে খাপখাইয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়। এদিকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সুদ পরিশোধ, ভর্তুকি, ঋণ, ইক্যুইটি ও দায় বাদে অন্তত ৫০ শতাংশ সরকারি লেনদেন ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে এই ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী। এসব বিষয়ে অগ্রগতি ও সংস্কারমূলক কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কার্যপত্র তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর