বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা
গুলি ও হত্যার অভিযোগ

আওয়ামী লীগের ১১ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যা এবং গুলি চালানোর অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শিক্ষার্থীসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় পৃথক মামলায় পাঁচ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খিলগাঁওয়ে ছাত্র আন্দোলনে হামলায় সাব্বির নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পল্লবীতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় যুবলীগের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে ফেনীর মহিপালে শটগান দিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগে ‘ছাত্রলীগ ক্যাডার’ বলে পরিচিত ওসমান গনি লিটনকে (৩০) রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আল মামুন মিয়া ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আবদুল মোতালিব, আওয়ামী লীগ কর্মী সাব্বির, মারুফ ও ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত ৫ আগস্ট বিকালে উত্তরার জসিমউদ্দিন রোডের আরকে টাওয়ারের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস চলছিল। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

 গুলিতে শিক্ষার্থী ওমর নুরুল আবছার গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ওমর নুরুল আবছারের মায়ের অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ৩১ আগস্ট একটি মামলা হয়। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ ঘটনায় জড়িত দুই আওয়ামী লীগ নেতা আল মামুন মিয়া ও আবদুল মোতালিবকে শনাক্ত করে। এ দুজনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া গত ৫ আগস্ট বিকালে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে সানজিদ হোসেন মৃধা গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সানজিদের বাবা আদালতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করেন। এ মামলায় আওয়ামী লীগের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ‘ছাত্রলীগ ক্যাডার’ ওসমান গনি লিটনকে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট দুপুরে ফেনী মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল। ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন নবম শ্রেণির ছাত্র ওয়াকিল আহমদ শিহাব (১৭)। এ সময় লিটন ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় শিক্ষার্থী ওয়াকিল আহমদ শিহাব আহত অবস্থায় প্রাণ বাঁচানোর জন্য মহিপাল প্লাজা মার্কেটে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আসামিদের ছোড়া গুলিতে কপাল এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝাঁজরা হয়ে যায়। ওই অবস্থাতেই আসামিরা তাকে লোহার রড ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ ঘটনায় গত ২০ আগস্ট নিহত শিক্ষার্থী শিহাবের মা ফেনী মডেল থানায় ১৫১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ বলছে, খিলগাঁও থানার ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রানা ওরফে পিস্তল রানা ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক শ্রমিক লীগ সভাপতি তাজুল ইসলামকে মঙ্গলবার রাতে খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা গত ৪ আগস্ট খিলগাঁওয়ের মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টারের কাছে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় সাব্বির হোসেন নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া পল্লবী থানার বাউনিয়া এ ব্লকের যুবলীগের সভাপতি আবদুর রহমান ওরফে সুজন, সি ব্লক ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন খান ও সদস্য সোহেল নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর