শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারখানাগুলোয় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শান্তিপূর্র্ণভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় শিল্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সরেজমিনে আশুলিয়ার কাঠগড়া, জিরাবো, পুকুরপাড়, নরসিংহপুর ও জামগড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কারখানার সামনেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এর আগে সকালে শান্তিপূর্ণভাবে প্রবেশের পর কাজে যোগ দিয়েছেন অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা। তবে কারখানায় দাঙ্গাহাঙ্গামা, ভাঙচুর, বহিরাগত হামলা, অযৌক্তিক দাবি, কর্মবিরতিসহ চলমান সহিংসতা, বেআইনি ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২৪টি কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ছয়টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানা গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বেশকিছু কারখানার মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস টাঙানো হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো জহরচান্দা এলাকার রাতুল গ্রুপ, আল্পস অ্যাপারেলস লিমিটেড, জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার তাহারাত ফ্যাশন, দুর্গাপুর এলাকার ফ্যাশন ডট কম লিমিটেড, বুড়িপাড়ার ইথিক্যাল গার্মেন্টস লিমিটেড, কাঠগড়ার ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, জিহান গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, এআর ওয়েট প্রসেসিং লিমিটেড, ফিউচার ক্লোথিং লিমিটেড, এফজিএস ডেনিমওয়্যার লিমিটেড, আঞ্জুমান গার্মেন্টস। নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে, সব শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার সদয় অবগতির জন্য জানানো হয়, বর্তমানে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্ট কারখানায় দাঙ্গাহাঙ্গামা, ভাঙচুর, বহিরাগত হামলা, অযৌক্তিক দাবি, কর্মবিরতিসহ চলমান সহিংসতা, বেআইনি ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, একইসঙ্গে শিল্পাঞ্চলে সার্বিক আতঙ্কজনক অবস্থার কারণে কারখানা পরিচালনা করার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় এবং কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জানমাল ও সার্বিক নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ধারা ১৩ (১) মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে ফ্যাশন হাউস, মিলিনিয়াম টেক্সটাইল, এভারব্রাইট সোয়েটার, নাঈম নিট, জিহান গ্রুপের জিহান গার্মেন্টস, আজমাত গ্রুপের আজমাত অ্যাপারেলস লিমিটেড, জেড-থ্রি কম্পোজিট নিটওয়্যার, জি-থ্রি ওয়াশিং প্লান্ট লিমিটেড, চেইন অ্যাপারেল, কমফিট কম্পোজিট, এআর ওয়েট প্রসেসিং, জেনারেশন নেক্সট কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া জিরাবোর টেক্সটাউন গার্মেন্টসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার রাইজিং গ্রুপের অ্যাকটিভ কম্পোজিট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহমুদ খালেদ বলেন, ‘সকালে আমাদের কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগদান করেছেন। আমরা বিজিএমইএ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেওয়ায় কোনো ধরনের অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পাশের লুসাসা গ্রুপের কারখানাসহ অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা এসে আমাদের গেটে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের ছেড়ে দিতে হয়।’ ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির জানান, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, এপিবিএনসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।