শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাবেক মন্ত্রীর দুর্নীতির ফাইল গায়েব!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের দুর্নীতির ফাইল উধাও হয়ে গেছে। লুটপাট ঢাকতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফাইল গায়েব করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিনই ফাইল গায়েবের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। ওই ফাইলে সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের তালিকাও ছিল বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অফিস সহকারী পারভীন বেগম ফাইল হারানো নিয়ে থানায় জিডি করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের বরাদ্দের ১৪ কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে তালিকায়। এ ছাড়াও আরও প্রায় ৩৫ কোটি টাকার হিসাব, মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের কাগজপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ তালিকা রয়েছে ওই ফাইলে। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের দুর্নীতি ঢাকতে ফাইল গায়েব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সমাজসেবা উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমানকে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফাইল গায়েবের ঘটনার সঙ্গে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অফিস সহকারী পারভীন বেগম জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ তাকে চাকরি দিয়েছিলেন। তার বাড়ির পাশেই থাকেন ওই অফিস সহকারী। সরকার পতনের পর দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসার আগেই মন্ত্রীর বাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় সরিয়ে ফেলা হয় দুর্নীতির ফাইল। পারভীন বেগমকে সদর অফিসে বদলি করা হয়েছে। ওই ফাইলে অর্থ বিতরণ, বরাদ্দ তালিকা, নোট, রেজুলেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। আরও জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ, তার জামাই জিল্লুর রহমান, এপিএস মিজানের দুর্নীতি, সরকারি অর্থ লুটের ঘটনায় একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে সরকার। দুদকও তদন্ত করছে। এ মুহূর্তে সরকারি ফাইল গায়েব হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলে দাবি অনেকের। কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবীর বলেন, সমাজসেবা অফিসের অফিস সহকারী মোছা. পারভীন বেগম সরকারি অফিসের ফাইল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর জিডি করেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এদিকে ৬ আগস্ট ফাইল হারানোর এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর জিডি করা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। লালমনিরহাট-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী রোকন উদ্দিন বাবুল জানান, সাবেক মন্ত্রীর দুর্নীতি ঢাকতে ফাইল হারানো নাটক ছাড়া আর কিছু নয়। তাই ফাইল উদ্ধার করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক লালমনিরহাটের সহসভাপতি ডা. আশিক ইকবাল জানান, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের দুর্নীতি লুটপাটের চিত্র পত্রিকায় আসছে। তা গোপন করতে ফাইল গায়েব করা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবার উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, ফাইল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পত্রিকায় জানতে পারি। সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কালীগঞ্জ সমাজসেবা অফিসের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সমাজসেবা অফিসের সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটপাটে সরাসরি জড়িত সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ, তার ছেলে রাকিবুজ্জামান আহম্মেদ ও এপিএস মিজানুর রহমান। এ অফিস থেকে যেসব ফাইল গায়েব হয়েছে, তাতে এই তিনজনের শত কোটি টাকার দুর্নীতির চিত্র রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (সদ্য বদলিকৃত) আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি কোনো অনিয়ম, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নই।

সর্বশেষ খবর