রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা

পূজার নিরাপত্তায় সেনা পুলিশ র‌্যাব বিজিবি আনসার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পূজা চলাকালে মন্ডপের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, র‌্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করবেন দেশজুড়ে। পূজা উদযাপনকালে প্রতিটি পূজামন্ডপে আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত রাখা হবে। আগামী ৮ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সনাতন ধর্মের পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উপলক্ষে গত ২ অক্টোবর সকাল থেকেই মন্ডপগুলোয় টহল শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূজা শুরুর পর মন্ডপগুলোয় আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউএনও অফিস ও থানা থেকে মনিটরিং করা হবে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ বিশেষ টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে কি না, তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্গাপূজায় গুজব ছড়ানো, বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও দুষ্কৃতকারীদের অশুভ তৎপরতা রোধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

গত ৩ অক্টোবর থেকে সীমান্তের নিরাপত্তার পাশাপাশি পূজামন্ডপের নিরাপত্তায় কাজ শুরু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।

গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় সেনাপ্রধান শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানান।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সেনাপ্রধান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশব্যাপী জেলায় জেলায় পূজামন্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব সময় সেনাবাহিনী তৎপর রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রত্যেক বাংলাদেশি উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করবেন। পাশাপাশি, অন্য সব ধর্মাবলম্বীদের সহযোগিতা ও সম্প্রীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে এগিয়ে আসার আহ্বাান জানান তিনি।  এদিকে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, তাদের সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করা হচ্ছে। দুর্গাপূজা ঘিরে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্প থেকে দূরবর্তী পূজামন্ডপগুলোর নিরাপত্তার জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। মন্দির এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গত ৩ অক্টোবর আগারগাঁওয়ে কোস্ট গার্ডের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের স্টাফ অফিসার অপারেশনস লে. কমান্ডার সালমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাউৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ধর্মীয় উপাসনালয়সহ পূজাম পের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। উপকূলীয় এলাকাগুলোর মধ্যে কোস্ট গার্ড ঢাকা জোন ৩৭টি, পূর্ব জোন (চট্টগ্রাম) ৫০টি, পশ্চিম জোন (মোংলা) ১৩০টি ও দক্ষিণ জোন (ভোলা) ৮২টি, সর্বমোট ২৯৯টি মন্দির ও পূজাম পের সার্বিক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরনের নাশকতা থেকে জনগণের জানমাল এবং উপাসনালয় রক্ষা করা ও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।  গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ জানান, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি পূজামন্ডপে ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে। আনসার সদস্যরা আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় দিন পূজামন্ডপের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সব নিরাপত্তা সংস্থার মূল্যায়নের ভিত্তিতে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় পূজামন্ডপগুলোয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ হিসেবে আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পূজার নিরাপত্তায় এ বছর প্রথমবারের মতো স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে ব্যাটালিয়ন আনসার। সারা দেশে ৬৪টি জেলায় যে কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাটালিয়ন আনসারদের মোট ৯২টি টিম মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। প্রতিটি টিমে ছয়জন করে সদস্য থাকবেন।

এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে গত বুধবার মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা জানানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-২ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. জহিরুল হক স্বাক্ষরিত জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুর্গাপূজা উদ্?যাপন উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পূজামন্ডপ পরিদর্শন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো বক্তব্য বা গুজব ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব প্রাইডে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, পূজামন্ডপের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করবে। দুর্গাপূজা চলাকালে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশের পাশাপাশি সোয়াট, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, কুইক রেসপন্স টিম, ক্রাইম সিন ভ্যান ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এ বছর দেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। আইজিপি বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে জন্য পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ      মাধ্যমে গুজব রোধে পুলিশের সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর