কাশফুলের শুভ্রতার সুষমায় এ নগরে শরতের সৌন্দর্য প্রায় বিলুপ্ত। আকাশে সাদা মেঘের ভেলার সঙ্গে প্রকৃতির অবারিত শিল্প নাগরিক জীবনে রূপকথার গল্পের মতোই। ভুলে যাওয়া নগরীর বাসিন্দাদের সামনে শরতের সেই সৌন্দর্য তুলে ধরতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে গতকাল শরৎ উদ্যাপন করেছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, ঋতুপ্রকৃতির সৌন্দর্য তুলে ধরে মানুষের সুকুমার বৃত্তিকে জাগানোর জন্য ছায়ানট এ আয়োজনগুলো করে থাকে। রবীন্দ্রসরোবরের খোলা মঞ্চে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের ভাবনা ছিল, তবে বৃষ্টিবাদলের প্রাবল্যে সে ভাবনা থেকে সরতে হয়েছে। শরৎ অনুষ্ঠানের পরতে পরতে ছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনবদ্য নানা সৃষ্টি। পরিবেশনায় অংশগ্রহণকারী সবার পোশাকের সাজ ছিল শরৎ, কাশফুল এবং আকাশের নীল মিলিয়ে। বৃষ্টিস্নাত দিনে গতকাল ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে সকালটা শুরু হয় শরতের গানের সুরে সুরে। ‘শরতের স্নিগ্ধতা মুছে দিক মলিনতা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের শুরু হয় ‘ওগো শেফালি বনে মনের কামনা’ সম্মিলিত নৃত্যগীতর মাধ্যমে।
এরপর গানের সুরে, নাচের ছন্দে, পাঠপরিক্রমায় এগিয়ে চলে অনুষ্ঠান। একের পর এক একক সংগীত, আবৃত্তি ও পাঠ এবং জাতীয় সংগীত গেয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। শরতের এ অনুষ্ঠানে ছায়ানটের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত খ্যাতনামা শিল্পীরা অংশ নেন। শরৎ উৎসবের প্রথম একক গানের পরিবেশনায় ছিল ‘আলোর অমল কমল খানি কে ফুটালে’-সেমন্তী মঞ্জরী, ‘কার বাঁশি নিশিভোরে বাজিল মোর প্রাণে’-দীপ্র নিশান্ত, ‘শরৎ-আলোর কমলবনে’-প্রিয়াংকা ভট্টাচার্য্য, ‘আমার নয়ন-ভুলানো এলে’-অমেয়া প্রতীতি, ‘আমারে ডাক দিল কে’-অর্ণব বড়ুয়া, ‘কেন যামিনী না যেতে’-ওসুতপা সাহা, ‘এই তো তোমার প্রেম ওগো’-চঞ্চল কৃষ্ণ বড়াল, ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো’-ফারজানা আক্তার পপি, ‘বাজিল, কাহার বীণা’-লাইসা আহমদ লিসা ও ‘আমার রাত পোহালো’-পার্থপ্রতিম রায়। ‘ছেলেবেলার শরৎকাল’ লেখা থেকে পাঠ করে শুনিয়েছেন ডালিয়া আহমেদ। এরপর ‘শরৎ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম। ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়’, ‘শরতে আজ কোন অতিথি’ ও ‘দেখো দেখো, দেখো, শুকতারা’ কোরাস গানের সঙ্গে নাচের পরিবেশনায় ছিলেন ছায়ানটের ছোট ও বড়দের দলের শিল্পীরা। সবশেষ জাতীয় সংগীত দিয়ে শেষ হয় দেড় ঘণ্টাব্যাপী শরৎ উৎসবের পরিবেশনা।