পোশাক কারখানাগুলো এখনো অশান্ত রয়েছে। গতকালও আশুলিয়ায় একটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্বিতন্ডার জের ধরে বহিরাগতদের হামলায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। গাজীপুরে এদিন সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সব মিলিয়ে অশান্ত পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ২৪ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাভার (ঢাকা) : গতকাল দুপুরের পর আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার ডংলিয়ান ফ্যাশন লিমিটেড নামক চায়না মালিকানাধীন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্বিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করলে কারখানার স্টোর ম্যানেজার কনকের নেতৃত্বে বহিরাগতদের নিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। জানা গেছে, লোহার রড, স্টিলের পাইপ, কাঠ এবং বাঁশের লাঠি দিয়ে শ্রমিকদের বেধড়ক পেটানো হলে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারী কনকসহ ১৭ জনকে আটক করেন। পরবর্তীতে কারখানাটি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কারখানাটির এক শ্রমিক জানান, কিছুদিন আগে শ্রমিকদের দাবির মুখে নানা অনিয়মের অভিযোগে কারখানার এইচআর ম্যানেজার রফিকুল ইসলামসহ চার কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মধ্য থেকে ৮৮ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করেন। অন্য এক শ্রমিক জানান, কারখানার শ্রমিকরা যাতে দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে না পারে, এ জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ১ হাজার টাকা হাজিরায় বহিরাগত ৩০০ লোক নিয়োগ করেছে। তারা সাদা এবং কালা গেঞ্জি পরে প্রতিদিন কারখানার ভিতরে এবং বাইরে পাহারা দিচ্ছে। গতকাল কারখানা কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করা চার কর্মকর্তাকে আবারো চাকুরিতে পুনর্বহাল করলে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেন। তখন অনীক ও রফিকের নেতৃত্বে বহিরাগতরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। কারখানাটির সিকিউরিটি অফিসার আতিয়ার রহমান বলেন, কোম্পানি নিরাপত্তার জন্য হাজিরাভিত্তিতে বহিরাগত লোক রাখা হয়েছে। গতকাল শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বাগ্বিতন্ডা হলে তারা শ্রমিকদের ওপর হামলা চালালে অনেকেই আহত হন। পরবর্তীতে কারখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।অন্যদিকে আশুলিয়ার জিরাব পুকুরপাড় এলাকায় লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় প্রবেশ করে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে কারখানাটি এদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া একই এলাকার তাহারাত কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় গত বৃহস্পতিবার ১০ দফা দাবি আদায়ে শ্রমিকদের হামলা, ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনায় গতকাল থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া নরসিংহপুর ইথিক্যাল গার্মেন্ট, জামগড়া এলাকার পলমল গ্রুপের আয়েশা ক্লথিং ও ইয়ারপুর এলাকার আঞ্জুমান গার্মেন্টও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইউসুফ মার্কেট এলাকার জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে দাবি আদায়ে কয়েক দিনের টানা শ্রমিক অসন্তোষের পর বিজিএমইএ, সরকার ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পর আশুলিয়ার অন্য কারখানাগুলোতে কাজ শুরু করেছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি শিল্প এলাকায় সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুর : হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল ও বাৎসরিক ছুটির টাকার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের জিরানী এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল বিক্ষোভ করেছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে সড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, জিরানী এলাকার আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে এসে কারখানার প্রধান ফটকে জড়ো হন। পরে তারা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল ও বাৎসরিক ছুটির টাকার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার পাশের চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় সড়কটি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
জিরানী এলাকার একটি কারখানা ছাড়া আর কোথাও শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পরিদর্শক আবু তালেব। তবে এখনো বন্ধ রয়েছে জেলার আটটি পোশাক কারখানা।