সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে বলে মত দিয়েছেন ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক সেমিনারের বক্তারা। গতকাল রাজধানীর মহাখালী রাওয়া কনভেনশন হলে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সামরিক বাহিনী দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক বাহিনীর রাজনীতিকরণ এবং ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপের ফলে পেশাদারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হত্যা, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ছাড়া অযৌক্তিক বিচারে বিভিন্নভাবে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। সামরিক বাহিনীকে দেশের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুনর্গঠন প্রয়োজন। যাতে এ বাহিনীটি রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম এবং ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। আরও বক্তব্য দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফেরদৌস, মেজর (অব.) জামাল হায়দার, কমান্ডার (অব.) শাহরিয়ার, কমান্ডার (অব.) নেসার আহমেদ জুলিয়াস, লেফটেন্যান্ট (অব.) ইমরান কাজল প্রমুখ।
সেমিনারে সংস্কারের দাবি তুলে ধরে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে বরখাস্ত ও বৈষম্যের মাধ্যমে নিপীড়িত কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। বঞ্চিত অফিসারদের পুনর্বাসন এবং আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে কমিশন গঠন করে সামরিক আইনের সংস্কারের দাবি জানান তারা। নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার নেসার আহমেদ জুলিয়াস বলেন, আমরা সব সময়ই সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের আদর্শ মনে করি। তবে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে সশস্ত্র বাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং পেশাদারি বারবার বিঘিœত হয়েছে। ফলে আমরা দেখেছি কীভাবে সামরিক আইন ও নিয়মের অপব্যবহার হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। গুম ও খুন করা হয়েছে এবং বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তাদের অযৌক্তিকভাবে সামরিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে বিনা পেনশনে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্যের ক্ষতিকর ঘুণপোকা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে এবং ধ্বংস করা হয়েছে বাহিনীর প্রশাসনিক অবকাঠামো। এই ঘুণপোকা শুধু কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট করেনি, নষ্ট করেছে জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক পেশাদারি। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিচারের সম্মুখীন না করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ যত দিন পর্যন্ত মাফ না চায়, যত দিন পর্যন্ত তাদের অপকর্মের জন্য বিচারের সম্মুখীন না হয়, তত দিন তাদের রাজনীতির সুযোগ দেওয়া হবে না। সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এ সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।