ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত মাসে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির পরিধি বাড়ছে। শুরুতে ৫৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরে সাত আইনজীবী প্যানেল নিয়ে কমিটির সদস্য সংখ্যা এখন ৬২। ঢাকার ৫২টি থানায় কমিটি দিতে গতকাল যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হয়েছে নাগরিক কমিটির ‘ঢাকা রাইজিং’ কর্মসূচি। এর পরই সারা দেশে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মুখপাত্র শামান্তা শারমিন। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত শনিবার শাহবাগ থেকে ঢাকা রাইজিং কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় যেসব স্থানে তীব্র আন্দোলন হয়েছে, আপাতত সেসব স্থানে মতবিনিময় সভা বা সমাবেশ দিয়ে আমরা কর্মসূচি শুরু করেছি। প্রথমে ঢাকাকেন্দ্রিক কমিটিগুলো হবে। পরে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি করা হবে। এ জন্য সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, গণ অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের দায়ের করা মামলা পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে সাতজনের আইনজীবী প্যানেল যুক্ত হয়েছে। তাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ৬২ জন হয়েছে। আরও আইনজীবী এই প্যানেলে যুক্ত হবেন। নাগরিক কমিটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামে একটি প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে’ ওই কমিটি গঠিত হয়। কমিটির আহ্বায়ক হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী। তিনি এবি পার্টির সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। এর আগে নাসির উদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক। তিনি ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক। মুখপাত্র করা হয় সামান্তা শারমিনকে। গত শনিবার শাহবাগে আয়োজিত এক সমাবেশে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, রবিবার থেকে ঢাকা রাইজিং কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমরা পুরো ঢাকাকে সংগঠিত করে ফ্যাসিবাদী শক্তি ও ব্যবস্থার উৎখাত করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করব। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল যাত্রাবাড়ীর নূর কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সমাবেশে গণ অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজন ও আহতদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নেন। তারা গণ অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহদের পরিবারগুলোকে দ্রুত পুনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসা ও হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন। এ সময় অচিরেই গণ অভ্যুত্থানে হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেই পরিবারগুলোকে সম্মাননা প্রদান ও সহযোগিতা করা হবে বলে জানানো হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, নাগরিক কমিটি ঢাকার ৫২টি থানায় প্রতিনিধিত্বমূলক কমিটি গঠন করবে। ছোট ছোট করে প্রোগ্রাম করে আমরা কমিটি করব। কমিটিতে আমরা চেষ্টা করব শহীদ এবং আহতদের পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করতে। এ ছাড়া আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং থানার সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যেসব তরুণ জড়িত, আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা করছি। তবে এই কমিটি কেবল নাগরিকদের জন্য। যাদের ছাত্রত্ব শেষ তারা এতে অংশ নেবেন। এর পর আমরা কোন ফরম্যাটে যাব, তা ভাবব।