মকবুল নামের এক বিএনপিকর্মী হত্যার মামলায় সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অপরদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে রবিবার রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল সাবের হোসেন চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও সাবেক নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলামকে আদালতে হাজির করার সময় তাদের লক্ষ্য করে পচা ডিম নিক্ষেপ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাদের কিল-ঘুষিও মারা হয়। এদিন রিমান্ড শুনানি চলাকালে হঠাৎ আদালতে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় বিএনপির আইনজীবীদের দিক থেকে আসামিদের রাখা কাঠগড়ায় কয়েকটি ডিম নিক্ষেপ করা হয়। এর পর শুনানি শেষে পুলিশি ব্যারিকেটের মাধ্যমে আসামিদের হাজতখানার দিকে নেওয়া হয়। এ সময় আসামিরা আদালতের গেট থেকে হাজতখানায় যাওয়ার রাস্তায় পৌঁছামাত্র আগে থেকে অবস্থান নেওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করতে থাকেন। ডিম নিক্ষেপের পাশাপাশি কেউ কেউ আসামিদের কিল, ঘুষি দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসব কিল-ঘুষির কয়েকটি আসামিদের শরীরে আঘাত করে। এর পর পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত তাদের হাজতখানায় নেওয়া হয়।
সাবের হোসেনকে রিমান্ডে নেওয়া মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক হাসিনা সরকার পতনে বিএনপির এক দফার আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা যখন জড়ো হতে থাকেন। তখন আসামিরা বিএনপির সমাবেশ বানচালের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জন আসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ত্রাস সৃষ্টি করেন। তখন আসামিরা বিএনপি অফিসে প্রবেশ করে ভাঙচুর, নেতা-কর্মীদের লাঠিচার্জ ও গুলি করেন। এ সময় মকবুল নামে বিএনপির এক কর্মী মারা যান। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। এদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল তাদের ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী এ মামলার সঙ্গে আসামিদের সম্পর্ক নেই দাবি করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে অবহিত করে রিমান্ডের পক্ষে অবস্থান নেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতা করে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, এই আসামি ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী। তাকে জননিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হলে তিনি নিরাপত্তা তো দূরের কথা, জনগণকে ভয়ের রাজ্যে রাখার জন্য যা যা করার দরকার তাই করেছেন। অবৈধ সরকারের ১৫ বছরে তার মতো কর্মকর্তারা যত অনিয়ম আছে সব করেছেন। এর পর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল। তিনি বলেন, আমি এই সরকারের আমলে ১৫ বছর না, নয় বছর চাকরি করেছি। ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত চাকরিতে ছিলাম। আর জননিরাপত্তা বিভাগে ছিলাম মাত্র পাঁচ মাস। সরকারের একজন সাধারণ কর্মকর্তা হয়ে অনেক নির্দেশ অমান্য করেছি। অবসরে যাওয়ার পর কোনো ধরনের লাভজনক পদে চাকরি করিনি। এ সময় এজলাসে থাকা বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা চিৎকার শুরু করলে তিনি আর কথা বলেননি। এর পর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রবিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন আমিনুল ইসলাম খানকে বনানী থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
নজিবুর রহমান ২০১৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পান। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব করা হয়। দুই বছর পর ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান এ কর্মকর্তা। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদ থেকে ২০২৩ সালের মার্চে অবসরে যান মো. আমিনুল ইসলাম খান। তাদের রিমান্ডে নেওয়া মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী মহাসমাবেশ ডাকে। এই মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। এ সময় যুবদল নেতা শামীম নিহত হন। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা করা হয়।