চট্টগ্রামের সীতাকু শিপইয়ার্ড দুর্ঘটনায় আহত সাতজনের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ১৪টি ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাদের রক্তে এসব ভারী ধাতুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে দুরারোগ্য ব্যাধি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চলমান গবেষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ল্যাবে পরীক্ষায় উঠে এসেছে এ ভয়াবহ তথ্য। গবেষণার ফলাফলসূত্রে জানা যায়, ৭ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ড শিপইয়ার্ডে বিস্ফোরণে আহত হয়ে সাতজন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এর মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠলেও পাঁচজন মারা যান। বিসিএসআইআরের সেন্ট্রাল অ্যানালাইটিক্যাল অ্যান্ড রিসার্চ ফ্যাসিলিটিজ (সিএআরএফ)-এ এদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে রক্তে ১৪টি ভারী ধাতু যেমন আর্সেনিক, লেড, নিকেল, কপার, মার্কারির মতো উপাদান স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পাওয়া গেছে।
এ গবেষণার অন্যতম গবেষক বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, ‘এ গবেষণায় আমরা দেখার চেষ্টা করেছি আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়াদের জন্য আসা রক্তদাতাদের রক্তে কী পরিমাণ ভারী ধাতু রয়েছে এবং সেটি রোগীর শরীরে প্রবেশ করার পর সেখানেও মাত্রা বাড়ছে কি না। সীতাকু দুর্ঘটনায় আসা আহতদের সবাই জাহাজকাটা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাই পরিবেশগতভাবেই তাদের এসব ভারী ধাতুর প্রভাব থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। গবেষণায় আমরা দেখেছি যারা সুস্থ অবস্থায় আমাদের এখানে রক্ত দান করেছেন তাদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পরিমাণ ধাতু সীতাকু থেকে যারা এসেছিলেন তাদের রক্তে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি এক বছরের এক শিশু সার্জারি করাতে এলে দেখা যায় তার রক্তেও আর্সেনিক, ক্রোমিয়ামসহ বেশ কয়েকটি ধাতু অধিক পরিমাণে রয়েছে। এটি আসলেই শঙ্কার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।’ সিএআরএফের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান এবং রিসার্চ ফার্মাকোলজিস্ট কুতুব উদ্দিন আহমদ এ গবেষণার ফলাফল পেতে সহায়তা করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এ আহতরা বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসিব রহমানের চিকিৎসাধীন ছিলেন। সীতাকু দুর্ঘটনায় দগ্ধ দুজনকে আমরা এখন পর্যন্ত সুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে পেরেছি। তাদের রক্তে যেসব ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে তা নিয়ে আরও অধিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’ চিকিৎসকরা জানান, এসব ভারী ধাতুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীদের ফুসফুস, স্নায়ুর জটিলতাসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।