দুর্নীতি ও পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ ওঠায় হাই কোর্টের তিন বিচারপতি পাঁচ বছর ধরে এজলাসের বাইরে রয়েছেন। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁদের বিচারকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এরপর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তদন্তের সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য নেই।
আইনজ্ঞরা বলেন, পাঁচ বছরেও অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া দুঃখজনক। তাঁদের বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি ছিল। তাঁরা দোষী না নির্দোষ তা জানার অধিকার তাঁদের আছে। এভাবে একটি ঘটনা অমীমাংসিত অবস্থায় রাখা অবিচারের শামিল; যা বিচার বিভাগের জন্য দুঃখজনক বলে মনে করেন তাঁরা। বিচারকাজ থেকে প্রত্যাহার হওয়া হাই কোর্টের ওই তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। মূলত কোন আইনে তদন্ত করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন মামলার রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি হলেই তিন বিচারপতির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে, না সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে- এ বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি। তবে এ যুক্তির সঙ্গে একমত নন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণে সংসদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগ রায় দেন। ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। সে আইনেই বিচারপতিদের দুর্নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’ তিনি বলেন, ‘তিন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা অনাকাক্সিক্ষত। গত সরকারের একটা বড় সমস্যা ছিল “ইগো” (অহংবোধ)। তারা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল মানে না, অথচ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এখনো বিদ্যমান।’ তিনি বলেন, ‘আগের আইনমন্ত্রী ইচ্ছা করে আইন পরিপন্থি কাজ করেছেন। পকেটে যেভাবে মানিব্যাগ ব্যবহার করা হয়, ঠিক সেভাবেই তিনি বিচার বিভাগ ব্যবহার করেছেন।’ মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমি মনে করি বিচার বিভাগের স্বার্থে তিন বিচারপতির বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।’সুপ্রিম কোর্টসূত্রে জানা গেছে, ওই তিন বিচারপতি ২০১৯ সালের আগস্টে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর কিছুদিন ছুটিতে ছিলেন। পরে আর তাঁরা ছুটি নেননি। মাঝেমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের জন্য নির্ধারিত অফিসকক্ষে আসেন এবং কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে চলে যান। চাকরিবিধি অনুযায়ী, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ২০২৫ সালের ২৮ নভেম্বর এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক ২০২৬ সালের ৩১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা।