উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) প্রণয়ন না করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ফের গাছ কেটে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবার পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পেছনে ও সিএসই ভবনের সামনের জঙ্গল কেটে এ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে, সিএসই ভবনের পূর্ব পাশের লেক ভরাট করে এবং গাছ কেটে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে প্রশাসন। সেবার শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সাময়িক কাজ বন্ধ রাখে প্রশাসন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত স্থানটিতে সুতা টাঙিয়ে লাল পতাকা ঝুলিয়ে এবং লোহার বেড়া দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে জায়গাটিতে ভবন নির্মাণ করা হলে বিভিন্ন প্রকারের শতাধিক ছোট-বড় গাছ কাটা পড়বে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের আমল থেকে বিভিন্ন সময় একাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে সহস্রাধিক গাছ কাটা হয়েছে। এতে একাধিকবার শিক্ষার্থীরা উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসন। বরং ধাপে ধাপে গাছ কেটে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে।
এদিকে মহাপরিকল্পনা ছাড়া গাছ কেটে নতুন করে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বিকালে গাছ কাটার স্থানে এবং ভরাট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন লেকের পাড়ে পৃথক এ মানববন্ধন করেন তারা। তাদের দাবি, অবিলম্বে উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা, ভরাট হয়ে যাওয়া লেকগুলো খনন করে জলপ্রবাহ নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্মিলিত লেক ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি গঠন করা। এ বিষয়ে জাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সজীব আহমেদ জেনিচ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ বর্তমান প্রশাসনের অনেকেই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু তারা নিজেরাই এখন যত্রতত্র গাছ কেটে, লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’ জাবি ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলছি, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া জাহাঙ্গীরনগরে কোনো ভবন নির্মাণ হবে না।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গাটিতে ভবন করা হলে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব। বাজেট না থাকায় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন কোষাধ্যক্ষ। এ বিষয়ে পরিবেশবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের জন্য ‘টিএমসি’ কমিটি রয়েছে। তারা বিভিন্ন অংশীজন ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে জায়গাটি নির্ধারণ করেছে।