জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে আনাসসহ ছয়জনকে হত্যার মামলায় গতকাল শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলামকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এই মামলার আট আসামির মধ্যে অপর চারজন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক। চানখাঁরপুলে গণহত্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৫ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, চানখাঁরপুলের ঘটনার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে গত রবিবার চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। এখন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য চার সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। ট্রাইব্যুনাল এই আবেদন মঞ্জুর করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ২৫ মে তারিখ ধার্য করেন।
শুনানি শেষে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বহু প্রমাণ মিলেছে। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় এই প্রথম কোনো মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে জমা দিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ মামলার তদন্ত শেষ করতে সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে ৭৯ জন সাক্ষীর। তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ১৯টি ভিডিও, ২টি অডিও রেকর্ড, সংবাদপত্রের ১১টি প্রতিবেদন ও ৬ জনের মৃত্যুসনদ দাখিল করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনও মূল তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, গণ অভ্যুত্থানের সময় উল্লিখিত আসামিরা চানখাঁরপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন।