বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

একরকম ফ্যাশন

একরকম ফ্যাশন

পোশাক ও ছবি : রঙ বাংলাদেশ

একটা সময় এক রকম পোশাক হতো দুই বোন বা দুই ভাইয়ের। যমজ বা পিঠাপিঠি ভাইবোন একই রকম পোশাক পরত।  এর ধারাবাহিকতায় এসেছে ‘ম্যাচিং পোশাক’। তবে এখন দম্পতিরাও মিলিয়ে পোশাক পরেন। অনেকে আবার পরিবারের সবার সঙ্গে একই রকম পোশাকে গা ভাসান...

বিশেষ দিনের পোশাকে মন ও মতের একাত্মতা প্রকাশ করতে চান যুগলেরা। বেছে নিতে চান একই রং ও নকশার যুগলবন্দি পোশাক। আবার কখনো পরিবারের ছোট্ট ছেলেটি বায়না ধরে, বাবার মতো পাঞ্জাবি পরবে সে। মেয়েটা হয়তো আবদার করল, তার জামাটি হবে মায়ের শাড়ির মতো। কেননা, ঈদ উৎসব বলে কথা। এক রকম পোশাকে পরিবারের সবার সঙ্গে গা না ভাসালেই নয়।

ভালোবাসার এমন প্রকাশ নতুন দম্পতিদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাগড়ির সঙ্গে শাড়ির কিংবা শেরওয়ানির সঙ্গে শাড়ির রং মিলিয়ে কেনার চল শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। এরপর বিভিন্ন উৎসব ঘিরে একই রং ও নকশার পোশাক বানাতে শুরু করল দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। ধীরে ধীরে পরিধি বেড়ে রূপ নিল ফ্যামিলি সেটে। বাবা-মা ও সন্তান এক কাপড়ে ধরা দিতে শুরু করলেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজকাল এক রকম পোশাকে ক্রেতার আগ্রহ বেশ। ফ্যাশন হাউসগুলোতে ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া-শাড়ি, পাঞ্জাবি-শাড়ি, পাঞ্জাবি-সালোয়ার-কামিজ এসেছে। একই নকশার পাঞ্জাবি বা ফতুয়ার রয়েছে ছোট-বড় সব সাইজ। সালোয়ার-কামিজ কিংবা শাড়ির বেলাতেও রাখা হয়েছে এই সুযোগ।

একটা সময় শুধু শাড়ি বা কামিজের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি, কানের দুল বা টিপ পরাকে বোঝানো হতো ম্যাচিং। বিজয় দিবস বা পয়লা বৈশাখ কিংবা বসন্তবরণ অথবা ভ্যালেন্টাইন দিবসে এক রকমের পোশাক পরার চল ছিল তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। এখন যে কোনো পারিবারিক দাওয়াতেও পরিবারের সব সদস্যকে এক রকমের পোশাকে দেখা যায়। বর্তমানে ম্যাচিংয়ের পরিধি তাই অনেকটাই বিস্তৃত। তবে এই বিস্তার এক দিনে ঘটেনি।

সমুদ্রের পাড়ে, পাহাড়ে বা কোনো রিসোর্টে গিয়ে কয়টা দিন আরাম করার আগে অনেকেই ম্যাচিং পোশাক জোগাড়ে ঘুম হারাম করেন। সুন্দর একটি ছবির প্রথম শর্ত নান্দনিক পোশাকে তত্ত্বে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। ফলে খুব দ্রুতই এই ট্রেন্ড শেষ হচ্ছে না। অন্তত করোনা ও ডেঙ্গুর হাত ধরে আসা দিনগুলোতে বিনোদনের যে আকাল, তাতে এক রঙের পোশাক পরে ছাদে গিয়ে ছবি তোলাও আনন্দের। এই আনন্দে এখন শিশুরাও শামিল। ছোটদের জন্যও এখন কাস্টমাইজড পোশাক পাওয়া যায় ফ্যাশন হাউসগুলোয়। এক ডিজাইনে সবার পোশাক বানানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে উঠেছে অনেক গ্রুপ। তারা প্রি-অর্ডার নেয় এবং চাহিদামতো পোশাক সরবরাহ করে থাকে। দিবস অনুযায়ী থিম নির্ধারণ করে অনেক ফ্যাশন হাউসও পোশাক তৈরি করছে। এ বিষয়ে দেশের অন্যতম রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস জানিয়েছেন, এক দশকেরও বেশি আগে ম্যাচিং ড্রেসের চল শুরু হয়। গত তিন-চার বছর ধরে পরিবারের সব সদস্যের অংশগ্রহণে এর প্রচলন অনেক বেড়েছে। তবে এটাকে ট্রেন্ড বলা যায় না। এক রকমের পোশাক পরলে প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীকেও সত্যিকারের জুটি বলে মনে হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই রকমের পোশাক পরলে দেখতে ভালো লাগে। এই ভালো লাগা বোধ থেকেই ম্যাচিং পোশাক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

নগরবাসীর এমন বাসনা পূরণ করতেই এসেছে যুগল পোশাকের চল। আর ডিজাইনাররা এই কাজটিকে আরও বেশি সহজ করে দিয়েছেন। এবারের ঈদ উৎসবে এ ধরনের পোশাক ভালো গুরুত্ব পেয়েছে বলে মন্তব্য বিক্রেতাদের। রাজধানীর ছোট-বড় ফ্যাশন হাউসের বিক্রয়কেন্দ্রে এমন পোশাকের সম্ভার চোখে পড়ছে। আড়ং, রঙ-বিশ্বরঙ,  রঙ বাংলাদেশ, ফড়িং, অন্যমেলা, প্রবর্তনা, নিপুণ, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জনস, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিআনা, দেশাল, নগরদোলা, সৃষ্টি, নিপুণ, এড্রয়েটসহ বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে এক রকম পোশাকের উপস্থাপনা। মিলছে আজিজ সুপার মার্কেটের কিছু দোকানেও। দাম ২ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে।

লেখা : ফেরদৌস আরা

সর্বশেষ খবর