১৯ নভেম্বর, ২০২১ ১১:৫২

বিশ্ব টয়লেট দিবস ২০২১

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্ব টয়লেট দিবস ২০২১

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী অসমর্থিত, অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছেন। তাদের কাজের ধরনের জন্য অনেকেই তাদেরকে এড়িয়ে যান।

ওয়াটারএইডের একটি নতুন বৈশ্বিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারি এই জনগোষ্ঠীর জীবিকার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে যার ফলে এদের অনেকেই অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করছেন বা কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই অতিরিক্ত ঝুঁকি গ্রহণ করছেন।

'স্যানিটেশন ওয়ার্কারস: দ্য ফরগটেন ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারস ডিউরিং দ্য কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকস' শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারিতে দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন অনেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিরাপদ পানি, যথাযথ স্যানিটেশন এবং উন্নত স্বাস্থ্যসুবিধা ছাড়াই হাসপাতাল, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার এবং সামাজিক পর্যায়ে ফ্রন্টলাইনে কাজ করে গিয়েছেন।

ভাইরাসের হুমকি ছাড়াও পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমে অনেক রকম বিপদ রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা ও রোগের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি থাকে এবং তাদেরকে প্রায়শই মনুষ্য-বর্জ্যের সাথে সরাসরি সংস্পর্শে আসতে হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গর্তবিশিষ্ট টয়লেটের ধারালো অংশবিশেষ ও দুর্বল অবকাঠামোর ফলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন এবং এর থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের ফলে তারা জ্ঞান হারাতে পারেন, এমনকি এতে মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে।

৫৫ বছর বয়সী কমলেশ টাঙ্ক গত ৩৫ বছর ধরে ভারতের রাজধানী দিলি­র কাছাকাছি একটি শহরে শুকনো টয়লেট পরিষ্কার করছেন। দুর্গন্ধের জন্য তিনি তার নাক ও মুখ ঢেকে রাখতেন, কিন্তু এর জন্য কখনও বাড়তি কোনো সুরক্ষা পোশাক ব্যবহার করেননি, বা মহামারি চলাকালীন সামাজিক দূরত্বের বিষয়েও তেমন গুরুত্ব দেননি।

এ সম্পর্কে ৩৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারী কনা নাগমনি, যিনি পেশায় একজন ঝাড়ুদার বলেন, ঝাড়ু দেওয়ার সময় কখনও কখনও আমাকে মানুষের মলও পরিস্কার করতে হয়, কিন্তু এসময় মোছার জন্য একটা কাপড় ছাড়া আর কিছু থাকেনা। আমি যেখানে কাজ করি সেখানে আশেপাশে হাত ধোয়ার মত কোনো জায়গা নেই, তাই হাত ধোয়ার জন্য আমাকে অফিসে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

প্রতিবেদনের ফলাফলে দক্ষিণ এশিয়া, বুর্কিনা ফাসো এবং নাইজেরিয়ার কেসগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াটারএইডের প্রধান নির্বাহী টিম ওয়েনরাইট বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওয়াশ পরিসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চলমান ও ভবিষ্যত মহামারি থেকে সুরক্ষিত থাকতেও এটি অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ছাড়া এটি চলমান থাকা সম্ভব নয়। সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও উন্নত ভবিষ্যত নিশ্চিতের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিকও বিবেচনায় রেখে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য বিনিয়োগ করা ও তাদের সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, সমাজে স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের পেশার কোনো স্বীকৃতি নেই। তারা সামাজিক অবজ্ঞা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন, যদিও তারাই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় কাজ করার কারণে সবচেয়ে বেশি অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকেন। স্যানিটেশন এবং বর্জ্য শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য পরিচালনা এবং বীমা ও সামাজিক সুরক্ষার প্রচারের জন্য সরকার, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সংস্থা এবং কমিউনিটি পার্টনারদের একসাথে কাজ করা উচিত।

দেশের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার এবং এর প্রধান অংশীদারদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ওয়াটারএইড; যার লক্ষে তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল কোভিড-১৯ টিকাদানের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অগ্রাধিকার দান।

টিকাদান কর্মসূচিতে বর্জ্য এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেন উপেক্ষিত না হন, তা নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন নিবন্ধন পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছিল, সেই সাথে মোবাইল রেজিস্ট্রেশন বুথ এবং ফলো-আপের মাধ্যমে ভ্যাকসিনেশন পরিচালনাও নিশ্চিত করা হয়েছিল। 

বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির 

সর্বশেষ খবর